বিএনএ, ঈদগাঁও (কক্সবাজার): ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুরে মা ও তার দুই শিশু সন্তানের নিহতের ঘটনাটি এখনো রহস্যাবৃত। সংগঠিত ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
সম্প্রতি ঈদগাঁও উপজেলার আওতাধীন ইসলামপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূ ও তার দুই শিশু কন্যার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গৃহবধূকে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় পাওয়া যায়। আর দুই মেয়েকে শোবার খাটে মৃত অবস্থায় পায় পুলিশ। নিহত গৃহবধূর নাম জিশান আক্তার (২৩)। তিনি ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালি নতুন অফিসের শহিদুল হকের স্ত্রী। তাদের দুই মেয়ের নাম জাবিন(৫) ও জেরিন(২)।
ঈদগাঁও থানা পুলিশ দল মরদেহ ৩টি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। পরদিন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ গুলো আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত ৩ জনকে গৃহবধূর পৈত্রিক গ্রাম ঈদগাঁও মধ্যম ভোমরিয়া ঘোনার কবরস্থানে দাফন করা হয়। সংগঠিত নৃশংস এ ঘটনার দুইদিন পর ঈদগাঁও থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলা নং-৬। নিহত গৃহবধূর মাতা মোহছেনা আক্তার এ মামলার বাদী। তিনি ঈদগাঁও মধ্যম ভোমরিয়া ঘোনার নুরুল কবিরের স্ত্রী। মামলায় শহিদুল হক (৩৩), তার ভাই জিয়াউল হক (৪০) ও জিয়াউল হকের স্ত্রী লুৎফা আক্তার(৩০) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়।
২৪ ডিসেম্বর রুজুকৃত এ মামলাটি ঈদগাঁও থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোঃ রেজাউল করিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/০৩) ১১(ক)/৩০ তৎসহ পেনাল কোড-১৮৬০, যৌতুকের দাবিতে পরস্পরের যোগসাজশে নির্যাতনের মাধ্যমে খুনের অপরাধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় যে, নিহত গৃহবধূর স্বামী শহিদুল ব্যবসার কথা বলে দুই বছর পূর্বে শ্বশুর বাড়ির কাছ থেকে জোরপূর্বক তিন লক্ষ টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যৌতুক বাবদ সে গত ১৯ ডিসেম্বর আরো ২ লক্ষ টাকা শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে দিতে স্ত্রী জিশান আক্তারকে চাপাচাপি করতে থাকে। শ্বশুর পক্ষের লোকজন দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় শহিদুল উল্লেখিত আসামিদের যোগসাজশে তার স্ত্রীকে অকথ্য নির্যাতনের মাধ্যমে খুন করে। পরে তাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে রশিতে টাঙ্গিয়ে রেখে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার নাটক মঞ্চস্থ করে। এ সময় উপস্থিত দুই শিশু কন্যার প্রতিবাদ ও কান্নাকাটিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদেরও খুন করে।
ঈদগাঁও থানা পুলিশের সুরতহালের বরাত দিয়ে বাদিনী আরো উল্লেখ করে যে, অভিযুক্তরা যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তার মেয়ে জিশান আক্তার ও দুই অবুঝ শিশু কন্যাকে খুন করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস,আই মোঃ রেজাউল করিম জানান যে, এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা জানতে চাইলে এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের লোকজন এসেছিলেন। তারা তাদের মত তদন্ত করেছেন। আমরা আমাদের মতো কাজ চালিয়েছি। তবে ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিক আলামত মতে গৃহবধূ নিহতের ঘটনাটি হত্যাকান্ড নয় বলে তার ধারণা।
অন্যদিকে বালিশ চাপায় নিষ্পাপ শিশু ২টির মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু বালিশ চাপা কে দিয়েছে তা এখনো রহস্যাবৃত। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গৃহবধু বিষপানে আত্মহত্যা করেছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ভিসেরা রিপোর্ট সংরক্ষণ করে ফরেসনিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হতে পারে।
এদিকে এ মামলা দায়েরের চার/ পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ। আসামিদের গ্রেপ্তারে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিএনএ/মোঃ রেজাউল করিম, ওজি