বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় অংশ নেন ২৫ থেকে ৩০ জন। তাদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও অনেকে এখন পর্যন্ত অধরা। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আলিফকে কোপানোয় অংশ নেন চারজন। পরে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটান সেখানে থাকা আরো ২৫ থেকে ৩০ জন। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানটি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন কিছু আইনজীবী।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান- মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান আলিফ। তখন তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এক ইকবাল বাহার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আলিফসহ কয়েকজন আইনজীবী প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কোতোয়ালির বান্ডেল রোডে যান। ঐ সময় সশস্ত্র লোকজন ধাওয়া দিলে আদালত ভবনের অদূরে কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন সেবক কলোনির একটি বাসার সামনের রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান আলিফ। এ সময় অন্যরা দৌড়ে চলে গেলেও রাস্তায় পড়ে যাওয়া আলিফকে কিরিচ দিয়ে কোপাতে থাকেন চন্দন দাস নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ বলছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলিফকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। আলিফের নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন সেখানে থাকা আরো ২৫ থেকে ৩০ জন। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মনু মেথর ও রাজীব ভট্টাচার্য্যকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বেশিরভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়া শুভ দাস নামে একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীও ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া তিন মামলায় শুক্রবার পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িত বলে জানা গেছে।
নগর পুলিশের ডিসি (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ চলছে। অনেককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জড়িত অন্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন তিনি।
মামলার আসামিরা হলেন- কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোড সেবক কলোনি এলাকার বাসিন্দা চন্দন, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, দুর্লভ দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
স্থানীয় লোকজন ও আলিফের সহকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন যুগিয়েছেন বলে জেনেছেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন- মামলার এজাহারে এমনটি উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করেছেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে দুই মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের এডিসি (জনসংযোগ) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ