বিএনএ, সাভার : ঢাকার ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে এনে সালিশির নামে সংখ্যালঘু চর্মকার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও থুতু দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইউপি সদস্য মীমাংসার নামে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও পরিষদের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মারধর ও থুতু দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভিতরে ভুক্তভোগী গোকুল মনিদাসকে নির্যাতনের একটি ভিডিও মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এরপর থেকে নির্যাতনের প্রতিবাদে দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব নেটিজেনরা।
সুয়াপুর ইউনিয়নের আটানীপাড়ার এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী গোকুল মনিদাস খড়ারচর এলাকার বাজারে চর্মকারের কাজ করেন।
ভুক্তভোগী গোকুল বলেন, ‘আরেকজনের বউয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়েলো। আমারও বউ-বাচ্চা আছে। পরে ওই মহিলা আমার কাছে চলে আসছিলো। তখন আমি তাকে দ্বিতীয় বিয়া কইরা ঘরসংসার করি। ৪-৫ মাস আগে আমার সাথে ঝগড়া লাগার পর তার আগের স্বামীর কাছে চলে যায়। এতদিন ওইখানেই ছিলো। গত ২৬ নভম্বের ওই মহিলা আমার বাড়িতে এসে বলে, আমাকে তুমি বাঁচাও। আমার জামাই আমাকে মেরে ফেলবে। তখন আমি তাকে বাড়িতে উঠিয়েছি। বাইত্তেপরে এইটা নিয়া আমার বাড়ির সামনে ২৭ নভেম্বর মেম্বারসহ এলাকার লোকজন সালিস বসায়। আমারে আর ওকে এলাকা ছেড়ে যেতে হবে এটাই বিচারে রায় হয়।’
গোকুল আরও বলেন, রাত ৯টার দিকে ওই বিচার থেকে সফি মেম্বার দুই গ্রাম পুলিশরে দিয়া আমাকে আর ওই মহিলাকে কাউন্সিলে নিয়ে যায়। পরে আমাদের দুইজনরে দুই রুমে রাখে। দফাদার রহিম আর চৌকিদার ফজল আমাকে লাঠি দিয়া মাইরা সারা শরীরে দাগ বানায় দিছে। রহিম আমারে থুতু মেঝেতে ফেলে চেটে খেতে বাধ্য করেছে। সেটা আবার মোবাইলে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ড়ে দিতে বলছে লোকজনরে।
গোকুল অভিযোগ করেন, ‘মেম্বার সফি কাউন্সিলে নেয়ার পরে মিমাংসার করবো এই জইন্যে ১৫ হাজার ট্যাকাও চায়। আমি অনেক কষ্টে ৫ হাজার ট্যাকা দিছি।’
অভিযোগের বিষয়ে সুয়াপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, পাড়ার বিচার না মানায় সফি মেম্বার ওকে তখন কাউন্সিলে আনায়। আমরা আনছি। পরে মহিলাডারে অর স্বামীর সাথে পাঠায় দিয়েছে। কাউন্সিলের মধ্যেই পরে সফি মেম্বার ওক কান ধইরা উঠবস করাইছে। বলেছে, আর কোনদিন ওই মহিলার দিকে যাবি না।
কারা থুতু চাটালো কিংবা মারধর করলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক পোলাপান ছিল। ওরা হয়তো ভিডিও করছে। আমারতো বাটন মোবাইল। আগেপরে ওরে মারছে কি না সেটা বলতে পারব না। তবে আমরা মারি নাই।’
সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সফিকুল ইসলাম সফি বলেন, ‘ও (গোকুল) একটা মহিলাকে বাহির করে আনছিলো। ওই মহিলাটার বড় মেয়ে, নাতী আছে। পরে ধমকটমক দিয়ে এইসব কাজ করতে মানা করা হইছে। কারণ ওদের এলাকার বিচারে ওইখানকার লোকজন ওকে মারবে। এই কারণে আমি পরিষদে নিয়ে গেছি। গোকুলের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। মারেও নাই। থুতু ফেলায় চাটানো, এগুলা হয় নাই।
মিমাংসার কথা বলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ভিডিও দেয়ার বিষয়টাও ভালো করে জানি না। ওইখানে চৌকিদার, আরও লোক ছিলো তারা থুতু চাটাইতে পারে। আমি তখন ওখানে ছিলাম না। রাত ১০টার দিকে চলে আসছি।’
সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, আমি কিছু জানি না এগুলি। এখন শুনছি। এইমাত্রই চিন্তাভাবনা করছি সমাধান করা যায় কি না?
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
বিএনএনিউজ/ইমরান খান/এইচ.এম।