” শামীমা চৌধুরী শাম্মী “
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: মাসুদ হাসান জুয়েল নানা অনিয়ম, দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বাড়ি কুমিল্লা হলেও চাকুরি নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা কোটায়। নিজ জেলায় চাকুরি করার বিধান না থাকলেও তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার পদে পোস্টিং পান। কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার ঘটনায় জড়িত করিৎকর্মা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাসুদ হাসান জুয়েল সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হাসান জুয়েল গত বছরের জুলাই- আগস্ট গণআন্দোলন পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতার আশির্বাদে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের অপেক্ষায় আছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: মাসুদ হাসান জুয়েল ২০০৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরে যোগদান করেন। কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা মো. মাসুদ হাসান জুয়েল জেলা কোটায় চাকুরিতে যোগদানকালে জালজালিয়াতির আশ্রয় নেন। তার স্থায়ী ঠিকানা ভূঁইয়া বাড়ী, ফুলতলী, থানা: দেবীদ্বার, জেলা: কুমিল্লা। কিন্তু তিনি চট্টগ্রাম এর জেলা কোটায় আবেদন করেন। ঠিকানা হিসাবে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ হালিশহর চানখালী রোড, চট্টগ্রাম বন্দর।
সূত্র জানায়, মো. এমরান (৩২),পিতা-মৃত আব্দুস ছামাদ, সাং-সেকেন্দার চেয়ারম্যান ঘাট,রমজান আলীর বাপেরবাড়ি, থানা-বাকলিয়া,জেলা চট্টগ্রাম, নামের আসামী গত ১ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। আসামী পালানোর ঘটনাটি তিনি ওই সময়ে কাউকে না জানিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে ঠিকাদার আলমের মাধ্যমে জেলার জুয়েল আসামীর বাড়ি গিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় আসামীকে ধরে নিয়ে আসেন। আসামীকে বাকলিয়া থানার সহযোগিতায় আটক করার পর তাকে আদালতে না পাঠিয়ে সরাসরি কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া আসামী পলানো নিয়ে থানা বা কারাগার কোন মামলাও করা হয় নাই। আসামী মো. এমরান এর পলায়নের ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে গত ১০ মে। কমিটি কী রিপোর্ট দিয়েছেন তা জানা যায়নি।
গত ২২ সেপ্টেম্বর কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলী করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনেও উল্লেখ করা হয়েছে তার নিজ জেলা চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন উঠেছে তিনি কিভাবে নিজ জেলায় পোস্টিং পেয়েছিলেন। বিধি অনুযায়ী নিজ জেলায় পোস্টিং নেয়া অবৈধ। গত বছরের ১০ নভেম্বর ডিআইজি মো. টিপু সুলতান ও এআইজি তালেব সিন্ডিকেট ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে জেলার মো. মাসুদ হাসান জুয়েল ও জেল সুপার ইকবাল হোসেনকে চট্টগ্রাম কারাগারে বদলী করেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডিআইজি টিপু সুলতান ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজি, বর্তমানে নুরে আলম মিনার মামা। মামা-ভাগিনা পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়।
পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাসুদ হাসান জুয়েলের বাবার নাম মো. মনিরুল হক ভূইয়া। কুমিল্লার দেবিদ্বার, ফুলতলীর বাসিন্দা মনিরুল হক ভূইয়া কারারক্ষীতে ভর্তি হয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর হয়ে অবসরে যান। মাসুদ হাসান জুয়েলের চাচা সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস তাকে নিয়োগ প্রদানের জন্য সুপারিশ করে। তার ওই চাচা তখন এআইজি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন।
তার আপন বড় ভগ্নিপতি সাবেক সহ: প্রধান কারারক্ষী শাহীন কুমিল্লা কারাগারে কর্মরত থাকাকালীন ১ লাখ ইয়াবা বড়িসহ আটক হন এবং কারাগারে থাকেন। পরবর্তীতে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রজীবনে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন জুয়েল। তার আপন ভাই মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন কুমিল্লা নগর যুবলীগের সাথে জড়িত। আপন মামাতো ভাই ডিস ব্যবসায়ি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ট জন হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুয়েলের ভাই মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন ও মামাতো ভাই মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কুমিল্লা থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের কারা অধিদপ্তরের জেলারের সরকারি বাসভবনে গতবছর দুই মাস ধরে আত্মগোপন ছিলেন। এরপর নাজমুল হোসেন ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার সঙ্গে ভারতে দেখা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ হাসাস জুয়েল নিজে এককভাবে কারাগারের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন। অতীতে ক্যান্টিনের বাজার-সদাই কারারক্ষীরা করে থাকলেও বর্তমান কারাগারের সকল বাজার জেলার নিজে করেন। কেন্টিনের লাভের বড় একটি অংশ পদস্থরা ভাগাভাগি করেন।
চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের ভিতরে যমুনা- ৮কে ভিআইপিদের আরাম-আয়েশের জায়গা হিসাবে গড়ে তুলেছেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কারাগারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন জেলার জুয়েল। এ কাজে চট্টগ্রাম কারাগারের আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী বলে পরিচিত ঠিকাদার আলম ও বর্তমান জেলারের মামাতো ভাই মোহাম্মদ সালাউদ্দিন লেনদেনের বিষয়টি দফারফা করেন বলে সুত্রে প্রকাশ। তবে তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েলের সঙ্গে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।