24 C
আবহাওয়া
৩:০৬ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৪৬ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৪৬ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৪৬ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের হালচাল।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৪ সংসদীয় আসনটি আখাউড়া এবং কসবা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৪৬ তম আসন।

YouTube player

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ১ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৪ শত ৩২ জন। নির্বাচনে বিএনপির মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৩ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সিরাজুল হক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ৮ শত ৬৭ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এড. শাহ আলম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩ শত ১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৪ শত জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড. শাহ আলম বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৬ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির শহিদুল হোসেন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ৯ শত ৮৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মুশফিকুর রহমান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির মুশফিকুর রহমান বিজয়ী হন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ২ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এড. শাহ আলম । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৩ শত ৪০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড. শাহ আলম বিজয়ী হন 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫ হাজার ৮ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড. শাহ আলম বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৪ শত ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মুশফিকুর রহমান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮২ হাজার ৫ শত ৬৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনিসুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনিসুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজযী হন।। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনিসুল হক বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ২ শত ৬৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আনিসুল হক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মুসলিম উদ্দীন এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ জসিম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনিসুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ জসিম। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান ২ হাজার ৯ শত ৪৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.১৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৮৮%, বিএনপি ৩১.৭৯%, জাতীয় পার্টি ১২.০৯%, জামায়াত ইসলামী ৯.৩৬% ,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৩.৮৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৯৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৪৩%, বিএনপি ২৯.৩২% জাতীয় পাটি ৩০.৯৬%, জামায়াত ইসলামী ৫.৯৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৩১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৯০%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.৩২%, জাতীয় পাটি ১৫.৩৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৭০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.১৯%, ৪ দলীয় জোট ৪০.৪৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩৩% ভোট পায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া): এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন নিশ্চিত। এই আসন থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুসলেহ উদ্দিন, জেলা কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন হাজারী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি তারেক এ আদেল ।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ আসনটি কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো বিএনপি, কখনো আওয়ামী লীগের দখলে যায়। বর্তমানে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। আখাউড়ায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে। তবে দলীয় কোন্দল রয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম, অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম। একই অবস্থা বিএনপিতেও।

আখাউড়ায় দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপি। দুই গ্রুপই জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করে আসছে। এক গ্রুপের নেতৃত্ব আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান ও অপরগ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপির আলহাজ কবির আহম্মদ ভূঁইয়া।

জাতীয় পাটি ও জামায়াত ইসলামী প্রচুর ভোট রয়েছে এই আসনে। নির্বাচনে তাদের ভোট ব্যাংকও একটি ফ্যাক্টর। আওয়ামী লীগ চায় বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৪৬ তম সংসদীয় আসন (ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৪) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক বিজয় ধরে রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরও দেখুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৪৫ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩)

Loading


শিরোনাম বিএনএ