বিএনএ, কুমিল্লা: কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার নুরপুর শাহ ফাতেমিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মেহেদী হাসান শান্ত (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। এঘটনায় ছুরিকাঘাতে ৪ জন মারাত্মক আহত হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,গত ৮ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাযের পূর্বে নুরপুর জামে মসজিদে নুরপুর গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র আবু কাউসার(৩৪)-প্রকাশ অনিক, মোসলে উদ্দিনের পুত্র সাদ্দাম হোসেন(৩০), খোয়াজ আলীর পুত্র আল আমিন(২২), মনু মিয়ার পুত্র শাহজাহান(৪০), মোহাম্মদ আলীর পুত্র ছগির(২৩), বাহাদুর হোসেনের পুত্র বায়েজীদ(২৪), মুত.হোসেনের পুত্র সিরাজ(২৫), আবুল কাশেমের পুত্র মোখলেছ(২৬), মোসলে উদ্দিনের পুত্র জাহিদ(২৮), বজলু মিয়ার পুত্র আলম(৩০)সহ এলাকার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ ও নুরপুর গ্রামের শত শত মানুষের সামনে মসজিদের মাইক হাতে নিয়ে উপরোক্ত সংঘবদ্ধদের নেতা আবু কাউসার(৩৪) মসজিদের মাইক দিয়ে ঘোষণা করেন যে-যারা গ্রামের বাহিরে থাকেন, শুধু ঈদের সময় এলাকায় এসে মাদ্রাসার কমিটি বা স্থানীয় বিষয়ে কথা বললে কোরবানির গরু জবাইয়ের পূর্বে মানুষ কোরবানি হয়ে যাবে। মসজিদের ভিতরে এ ধরনের উগ্র উচ্চ বাচ্য ও অযাথিত কথার বিষয়টি নুরপুর গ্রামে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
মসজিদের মাইকে সংঘর্ষ মূলক বক্তব্য প্রচারিত হওয়া’য় জনমনে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ৯ জুলাই কোরবানি ঈদের আগের দিন বিকাল ৪ টায় নুরপুর এম আলী এন্ড এ বারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নুরপুর গ্রামের জাকির হোসেন সরকারের পুত্র মেহেদি হাসান শান্ত (২৫) ও আজমুল ফুয়াদ সাজিদ স্কুলের সামনে পৌছা মাত্রই আবু কাউসার(৩৪) এর নির্দেশে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন(৩০)সহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০জন সন্ত্রাসীরা মেহেদি হাসান শান্ত(২৫) এর উপর ধারালো ছোড়া দিয়ে আক্রমণ করেন। আহত মেহেদি হাসান শান্ত(২৫) এর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আক্রমনকারীদের হাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। ঘটনার সময় নিহত মেহেদি হাসান শান্ত’র পাশে থাকা ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমেরিকা প্রবাসী আজমুল ফুয়াদ সাজিদও গুরুতর আহত হয়ে স্থানীয় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১০ জুলাই নিহত মেহেদি হাসান শান্তের পিতা জাকির হোসেন সরকার দেবিদ্বার থানায় আবু কাউসারকে প্রধান আসামি করে অভিযোগ করলেও দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আবু কাউসার(৩৪)কে মামলার এফআইআর হতে বাদ দিয়ে মামলা এফআইআর করেন। যাহা মামলার বাদি নিহতের বাবা জাকির হোসেন সরকারের তথ্য মোতাবেক অভিযুক্তদের নাম অর্ন্তভুক্ত করেননি।
এবিষয়ে নিহত মেহেদি হাসান শান্তর বাবা জাকির হোসেন সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার ছেলে শান্তকে আবু কাউসার ওরফে অনিক ও সাদ্দাম হোসেন রাজুসহ ১৫/২০জন সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। আমি যাদের নামে থানায় অভিযোগ করতে যাই,তাদের বাদ দিয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর মামলাটি রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে মামলার বাদি জাকির হোসেন সরকার শান্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল হোতা আবু কাউসারসহ অন্যান্যদের নাম মামলার তদন্ত হতে বাদ দেওয়া ও মামলা তদন্তে দেবিদ্বার থানা পুলিশের কারসাজি রয়েছে এ মর্মে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিকট আবেদন করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের নির্দেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সমন্বয়ে পুনরায় মেহেদি হাসান শান্তর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়। পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এর সমন্বয়ে মেহেদি হাসান শান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়।
পিবিআইয়ের নিযুক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন,মসজিদের মাইকে হত্যা কাণ্ডের প্রধান ঘোষণাকারি ছিলেন আবু কাউসার প্রকাশ অনিক(৩৫)। তার সহযোগী সাদ্দাম হোসেন রাজু ও আবু কাউসারের মোবাইল কল রেকর্ডে পূর্বে হত্যার পরিকল্পনা চালিয়ে আসার যতেষ্ট তথ্য প্রমাণ মিলেছে, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৪ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আবু কাউসারের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। শান্ত হত্যার মূল হোতা আসামি আবু কাউসার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং:৩৭,তাং:৮ জুলাই , নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০এর ৯(১)/৩০ সংক্রান্তে গ্রেফতার হয়েছেন।
বিএনএ/মানছুর,এমএফ