বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক, ঢাকা: তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এখন আফগানিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি, কিন্তু তবুও তিনি এখনো নিজেকে পর্দার আড়ালে রেখেছেন। গোপন অবস্থানে থেকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে দেখা দিচ্ছেন না কোথাও।
নিউইয়র্ক পোস্টে এক নিবন্ধে হোলি ম্যাক কে লিখেছেন যে, ইন্টারনেটে তার প্রচারিত ছবিগুলোও বহু বছরের পুরোনো বলে মনে হচ্ছে। তদুপরি, জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে তার ব্যর্থতার কারণে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বও ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি তালেবানদের নিজেদের মধ্যেও গুঞ্জন উঠেছে তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই।
যাহোক, তবে, আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাতের নবনিযুক্ত এই সুপ্রিম লিডার তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং কৌতূহলী বিশ্বের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ‘সঠিক মুহূর্ত’ এর অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট।
আখুন্দজাদা তার পূর্বসূরি মোল্লা আখতার মনসুরের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের মে মাস থেকে তালেবানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক, সামরিক এবং ধর্মীয় সব বিষয়েই তার চূড়ান্ত কথা বলার অধিকার আছে, এবং প্রতিবেশী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির মতোই তার অবস্থান। হোলি ম্যাক কে বলেন, তিনি চাইলে ইতিমধ্যেই গভীরভাবে বিভক্ত এবং রক্তাক্ত আফগান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ বা আরও ভাঙতে পারেন।
জাবিউল্লাহ নামে ২২ বছর বয়সী কান্দাহারের এক স্থানীয় যুবক জানান, আখুন্দজাদা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কান্দাহার শহরে এসেছেন। তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর ওই এলাকায় এটি তার প্রথম সফর ছিল। এসময় তার সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দেহরক্ষী দল ছিল।
তালেবানের বিদ্রোহের বছরগুলিতে আখুন্দজাদা পাকিস্তানের কোয়েটায় বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। তবে আমাদের বলা হচ্ছে যে, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর তিনি এখন কান্দাহারে আছেন, জানিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট।
কান্দাহার প্রদেশের তখতা পুল জেলায় জন্মগ্রহণকারী আখুন্দজাদার বয়স প্রায় ৫০-৬০ বছর বলে ধারণা করা হয়। ধর্মীয় বিষয়ে অনেক পাণ্ডিত্য থাকলেও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই।
আখুন্দজাদা তালেবানের আফগান আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন না, তবুও তিনি এই জিহাদি গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে আনুগত্য অর্জন করেছেন। এছাড়াও, আখুন্দজাদা ব্যক্তিগতভাবে তালেবান কমান্ডার এবং যোদ্ধাদের ইসলামি জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। তার কট্টর, শাস্ত্রীয় ইসলামী ব্যাখ্যা এবং আইনী জ্ঞানের জন্য তালেবানের অনেকে তাকে গুরু হিসেবে মান্য করে। তাকে ঘিরে তালেবানের ভেতরে একটা কাল্টের মতো তৈরি হয়েছে।
তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তালেবানের প্রথম শাসনে শরিয়া আদালতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং আফগান জনগোষ্ঠীর ওপর কঠোর শাস্তির সূচনা করেছিলেন। ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুড়ে হত্যা এবং খুনের জন্য প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া থেকে শুরু করে চুরি এবং কঠোর ড্রেস কোড লঙ্ঘনের দায়ে চাবুক মারার মতো শাস্তির প্রচলন করেছিলেন।
হোলি ম্যাক কে বলেন, ওই সময়কালেই প্রথম আফগানিস্তানে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ‘নৈতিকতা পুলিশ’ রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং নারীদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য কঠোর নিয়ম ও বিধি প্রয়োগ করা হয়েছিল।
ওই সময়ে তৎকালীন শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরই তালেবানের ফতোয়াগুলো চূড়ান্ত করতেন। আর এখন আখুন্দজাদা সেই একই ধরনের কর্তৃত্বের অধিকারী।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের কয়েক ঘণ্টা পর জারি করা এক বিবৃতিতে, পর্দার আড়াল থেকে এই শাসক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি ‘আফগানিস্তানে ইসলামী নিয়ম ও শরিয়াহ আইন সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবেন’।
তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার সময় তার সম্মতি নিতে হয়েছে এবং নতুন কোনো মন্ত্রী নিয়োগ করতে হলেও তার অনুমোদন লাগবে। তার অনুমোদন ছাড়া কেউ মন্ত্রী হতে পারবে না।
ম্যাককে বলেন, আখুন্দজাদার নির্দেশেই তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং ২০২০ সালের শুরুতে বিতর্কিত দোহা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ