বিএনএ, ঢাকা: রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় টিপকাণ্ডে চাকরিচ্যুত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক তার চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে তার স্ত্রী ও দেড় মাসের সন্তানও আছেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার অপরাধে লতা সমাদ্দারের বিচার চান। ওই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তার সম্পূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ যদি থাকে সেটিও প্রচারের দাবি জানান তিনি।
তার স্ত্রী বলেন, দেড় মাসের শিশু নিয়ে এখন আমি রাস্তায় নেমেছি। আমার স্বামী কী করে খাবেন। কীভাবে সংসার চলবে। যদি সে অপরাধী হয় তবে সঠিক তদন্ত করে বিচার হোক। এসময় সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন নাজমুল।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) স্ত্রী ও দেড় মাসের শিশু সন্তান নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার লিখে এসব দাবি জানান নাজমুল তারেক। এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা তার সঙ্গে আলাপ করতে গেলে নাজমুল তারেক সেদিনের পুরো ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আমি সেদিন বাসা থেকে সকাল ৮টার দিকে বের হয়েছিলাম। আমি সেজান পয়েন্ট হয়ে আনন্দ সিনেমা হলের রাস্তার দিকে যাওয়ার জন্য আসতেছিলাম। ওইদিন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বলে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। এজন্য আমি উল্টো রাস্তা দিয়ে আসতেছিলাম। উল্টো রাস্তায় আসার জন্য আমি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমি যখন আসতেছিলাম। তখন অপর দিক থেকে এক নারীও আসছিলেন। আমি তাকে চিনি না। তিনি মোবাইলে কথা বলতে বলতে আসছিলেন। তখন সময় ছিল সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৪০।
তিনি যখন যাচ্ছিলেন, তখন আমার মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। তখন আমি পুলিশের পোশাক পরা ছিলাম। তিনি তখন প্রথম ধাক্কাতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আমাকে বলেন ‘এই বাস্টার্ড, তুই কি উল্টা যেতে পারিস’।
নাজমুল আরও বলেন, আসলে একজন মানুষ যখন দেখেন পুলিশ উল্টো রাস্তায় যায়, তখন প্রতিক্রিয়া জানানোই স্বাভাবিক। তিনি যখন উত্তেজিত হলেন, তখন আমি তাকে বলি ‘ম্যাডাম সরি’। আসলে আমি আপনার সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। একথা বলে যখন আমি আমার বাইকটা নিয়ে সামনের দিকে যাই, তখনও উনি আমার সঙ্গে চিল্লাপাল্লা করেন।
তিনি তখন আমাকে বলেন, তুই কি বাইক নিয়ে উল্টো যেতে পারিস। তোকে দেখতে জামাতির মতো লাগে। তোকে দেখলে জঙ্গীর মতো মনে হয়। বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলেন তিনি। এক পর্যায়ে আমি সামনে এগিয়ে যাই। যদিও উনি মিডিয়ায় বলেছিলেন আমি নাকি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাস্তায় উল্টো গেলে তো দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ নেই। সোজা চলতে হয়। আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম, তিনি তখন আমার ইউনিফর্ম ধরে টান দিয়ে আমাকে ফেলে দেন। আমি প্রমাণ ছাড়া কথা বলছি না। আমার ঘটনাস্থলে সাক্ষী আছে। যখন তিনি আমাকে ফেলে দেন, তখন আমার ‘ইমোশনালে’লাগছে। একজন পুলিশ সদস্য কতটা অসহায় যে, একজন পাবলিক তাকে ফেলে দিলো।যখন লতা সমদ্দারের সঙ্গে আমার কিছুটা কথা হয়, তখন বাকবিতণ্ডার পর্যায়ে যাওয়ার আগেই আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। পরে আমার অন্যান্য সহকর্মী পুলিশের যখন ডিউটি শেষ হয়, তখন আমি ডিউটিতে যোগ দেই। পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় জানতে পারি, রাজধানীতে টিপ পরা নিয়ে শিক্ষিকা লতা সমাদ্দার পুলিশের হেনস্থার শিকার।
’আসলে তিনি যে আমাকে ফেলে দিছে, তিনি একটা অপরাধ করেছেন। সেই অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য আমার বিরুদ্ধে টিপ কাণ্ড ছড়িয়েছেন। আপনারা জানেন যে, তিনি মিডিয়া অ্যান্ড থিয়েটারের শিক্ষিকা। তিনি জানে যে, কোথায় কোন নাটকটা করতে হয়। আমি অবশ্যই তার বিচার চাই।
ওই ঘটনার প্রমাণ প্রসঙ্গে নাজমুল বলেন, তদন্ত কমিটি প্রথম রিপোর্ট দেয় যে, টিপ বিষয়ে কটুক্তির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে যখন বিভাগীয় মামলা রজু হয়েছে, তখন অ্যাডিশনাল এসপি রহিমা আক্তার লাকী স্যার লিখেছেন, মোটরসাইকেল যাওয়ার সময় পথে লতা সমাদ্দারের সঙ্গে অরুচি শব্দ করলে বাগবিতণ্ডার ঘটনার ভিডিওটি মিডিয়ায় প্রচার হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়।অথচ ঘটনাস্থলে আমি যে বাইকে যাচ্ছি, সেটি দেখা গেছে। তাতে তো প্রমাণ হয় না যে, আমি অপরাধী।
কারণ, আইনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে অপরাধী বলতে হবে। আমার সিসি ক্যামেরায় কথা না আসুক। কিন্তু ওই সময়ে আমাদের কথা বলার বডি স্ট্রাকচারেও বুঝা যায় যে, আমি বাগবিতণ্ডা করছি কিনা। এমন কোনো ফুটেজ আমিও দেখিনি। গণমাধ্যমকে আমার অনুরোধ, আপনারা যদি পেয়ে থাকেন এমন ভিডিও, তাহলে প্রকাশ করেন। সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যতা প্রচার হোক। অপরাধী হয়ে আমার চাকরি গেলেও আমার দুঃখ নাই।
এসময় নাজমুল তারেকের স্ত্রী বলেন, মিথ্যা অপবাদে আমার স্বামীর চাকরি খেয়ে দিলো। এটা কি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন না। আমি দেড় মাসের বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নেমে গেছি। পুরো পরিবারটা আমাকে চালাতে হয়। এখন আমার স্বামী কী করে খাবেন, সংসার কীভাবে চালাবেন। আমার একটাই দাবি, সত্য প্রকাশ হোক। যদি আমার স্বামী অপরাধী হয়, তবে তার বিচার হোক মেনে নিবো। সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।
বিএনএ/ আজিজুল, ওজি