বিএনএ ডেস্ক: স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল সংকট এবং ওষুধের দাম নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্যরা।
সোমবার (২৯ আগস্ট) একাদশ জাতীয় সংসদের চলমাল অধিবেশনের প্রশ্নোত্তরপর্বে তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেককে উদ্দেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, টানা এক যুগ শাসনক্ষমতায় আওয়ামী লীগ অথচ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা রয়েই গেছে।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেন, মানসম্পন্ন চিকিৎসা নেই। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, টেকনিশিয়ান নেই। চিকিৎসার জন্য আধুনিক সরঞ্জামাদি নেই। এসব কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ সুচিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাচ্ছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে চলে যাচ্ছে।
এসব অভিযোগের জবাবে আমলে না নিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা আর বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে চলবে না। বাস্তবতা খতিয়ে দেখতে হবে। বিএনপির আমলে চিকিৎসাব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন দেশে চিকিৎসা খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট হয়েছে। ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ৫০ বেডে, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বেডে উন্নীত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে ও যুগোপযোগী করতে যা করা দরকার সরকার তাই করেছে। বলেন, অতীত ভুলে গেলে চলবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিএনপির আমলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার আবার তা চালু করেছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মাঠপর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বলতে কিছু নেই। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, টেকনিশিয়ান নেই। এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও নেই।
ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। অথচ একটি ওষুধ হাসপাতালে থাকলে এভাবে মানুষকে মরতে হতো না। প্রতিটি হাসপাতালে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক রাখার জন্য দাবি জানান তিনি।
জাপা সংসদ সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনেই সারা দেশে ভুয়া, ভেজাল ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠছে। যখন গড়ে ওঠে, তখন কেউ দেখার থাকে না। যখন কেউ মারা যায় বা গণমাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, হাসপাতালগুলোয় ওষুধ নেই। বাইরে ওষুধের একেকরকম দাম। একই ওষুধ দুই-তিন রকম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। গণফোরাম সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, হাসপাতালগুলোয় অনিয়ম হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢালাও অভিযোগ না করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে বলেন।
একই রোগের ওষুধে কোম্পানি ভেদে দামের তারতম্য আছে। এটার সমন্বয় করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, ফজলুর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের দাম পদ্ধতি অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে ওষুধের কাঁচামাল যেগুলো আমদানি করা হয় এবং অন্যান্য উৎপাদন খরচ ও ভ্যাট যোগ করে একটা মূল্য ঠিক করে দেয়া হয়। কিন্তু ওষুধের পরের দামটা (ভোক্তা পর্যায়ে) ঔষধ প্রশাসন দেখে না। ভ্যাট নির্ণয়টা সঠিক আছে কি না, সেটা তাদের এখতিয়ার। অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগের ১৩০টির মতো ওষুধ আমরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। বাকি শত শত ওষুধের দাম আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না।
জাহিদ মালেক বলেন, দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। অনেকেই কাঁচামাল ইউরোপ থেকে আসে, যার দাম বেশি। কেউ ভারত ও চীন থেকে আনে, তাদের আবার দাম একটু কম। এ বিষয়ে যা যা করার দরকার তার করার কথা বলেন মন্ত্রী।
বিএনপির সংসদ-সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, মন্ত্রী কথায় কথায় বিএনপির দোষ দেন। বিএনপির আমলের কথা বলেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই ১৫ বছরেরও বেশি সময়। অথচ স্বাস্থ্য খাতের জীর্ণদশা রয়েই গেছে। এ খাতে যত না উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অনিয়ম এবং লুটপাটের কথা বেশি প্রকাশিত হচ্ছে।
হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি সরকারের দোহাই দিয়ে আর কোনো লাভ নেই। ১৫ বছর টানা আপনারা ক্ষমতায়। দেশে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না বলেই মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। এই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আপনারা স্বাস্থ্য খাতগুলো দুর্বল করে রাখছেন কি না জানি না।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কিছুই তৈরি করেননি। গত ১৫ বছরে এ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে দেশের গড় আয়ু ৭৩ বছর, এমডিজি অর্জন হয়েছে। ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আপনাদের সময় একটা পুরস্কারের মুখও কেউ দেখেনি। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
জাহিদ মালেক বলেন, বিএনপি’র সময়ে কয়টা হাসপাতাল ছিল? এখন কয়টা হাসপাতাল আছে, সেটা জানেন? দেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। আপনাদের সময় ১০টাও ছিল না। এখন নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে সাড়ে তিনশ। আপনাদের সময় সিট ছিল সাড়ে ছয়শ। এখন ৩৪ হাজার নার্সিং আসন রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিএনএ/এ আর