বিএনএ ডেস্ক: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি আরও বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে দেশের সাতটি নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী বহু এলাকা। এসব এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৯টি উপজেলার ২’শ ৩০টি চর-দ্বীপচর নদী সংলগ্ন গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। তিস্তা দুধকুমোর, গঙ্গাধরসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ছুঁই-ছুঁই। পানি বন্দি মানুষ অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। বিছিন্ন হয়ে পড়েছে চর ও দ্বীপচরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও বীজতলা। ঝুঁকিতে রয়েছে সদর উপজেলার হোলখানার সারডোব কালুয়ারচরসহ কয়েকটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
ধরলা নদীর পানি ২৬ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, ব্রক্ষপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৩ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি ২৯ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, আর ব্রক্ষপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৬ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড।
উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েছে। জেলার কয়েকটি উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। এদের অনেকে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে ।
গাইবান্ধায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বাড়ায় জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ফসলি জমি ও গোচারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় বসত ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
নাটোরে পদ্মার পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির ও গবাদি পশু খাদ্যের সংকট। তলিয়ে গেছে রোপা আমন, আখ ও উঠতি ফসলের জমি।
টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে সদর, কালিহাতি, নাগনপুর, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ওইসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সপ্তাহব্যাপী এসব মানুষ পানিবন্দি হলেও সরকারি-বেসরকারিভাবে তারা পায়নি কোনো ত্রাণসহায়তা। এছাড়া, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে শতাধিক পরিবার।
ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ডুবে আছে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম।
গত এক সপ্তাহে আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীতে প্রমত্তা মধুমতি নদীর ভাঙনে একাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে হাজারো বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাহ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মধুমতি পাড়ের মানুষ।
আর পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে দুই ঘাটেই দেখা দিয়েছে যানবাহনের বাড়তি চাপ।
সোমবার (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই দেশের একাধিক জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো নদ-নদীর পানি বাড়ছে আবার কোনো কোনোটির কমছে। আগামি ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানান তিনি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি