গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চট্টগ্রামের রাউজান- সন্ত্রাসের জনপথ ও মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। এলাকার একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে অর্ধশতাধিক সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গত ১১ মাসে ১৪ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ীও। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ, জখম ও অন্যান্যভাবে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই( মঙ্গলবার) বিকালে চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কের রাউজানে সর্ত্তারহাট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তাঁর জীপ গাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারিদের বেশ কিছু মোটর সাইকেল।
নেতাকর্মীদের মানব প্রচীর তৈরি এবং দৌড়ে পালিয়ে মোটর সাইকেল যোগে স্থান ত্যাগ না করলে গোলাম আকবর মবের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ই নভেম্বর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ নানান অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে শোকজ করা হয়।
শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ধনী ব্যবসায়ীর তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়, ওমান বসবাসরত সিআইপি ব্যবসায়ী ইয়াসিনের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি, চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইয়াসিনের রাউজানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, সিআইপি ব্যবসায়ী মো. ফোরকানের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফোরকানকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন, অনুগত সন্ত্রাসীরা দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থানরত রাউজানের ব্যবসায়ীদের ওপর ঢালাও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্বের জেরে এখানে খুন-খারাবি থামছে না। পাল্টাপাল্টি হামলা, হত্যাকাণ্ডে বিপর্যস্ত পুরো রাউজান। ‘স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি। এমন নিয়ন্ত্রণহীন অরাজকতা আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরে কেউ দেখেনি।
গুলি, হামলা ও পাল্টাপাল্টি খুন এখন রাউজানের নিত্যদিনের ঘটনা। গত ১১ মাসে খুন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদলের পাঁচজন হলেন সেলিম, কমর উদ্দিন, ইব্রাহিম, দিদারুল ও মানিক আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগের চারজন হলেন আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়া, আবু তাহের ও মুহাম্মদ হাসান। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যবসায়ীও খুন হয়েছেন।
রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নিয়মিত হামলা, পাল্টা হামলা ও খুনের ঘটনা ঘটছে। গত ১১ মাসে থানার তিনজন ওসিকে বদলি করা হয়েছে। তবু শান্তি ফিরে আসেনি রাউজানে। হাজার হাজার মানুষ রাউজান ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী