38 C
আবহাওয়া
৫:২৫ অপরাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাবির কোটি টাকার ই-গেটের খোঁজ রাখে না প্রশাসন

রাবির কোটি টাকার ই-গেটের খোঁজ রাখে না প্রশাসন


।। সৈয়দ সাকিব।।

বিএনএ, রাবি: দেশে প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চালু হয় স্মার্ট আইডি কার্ডের ব্যবহার। বেশ ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাপ্তরিক কাজ অনলাইনের আওতায় আনতে ও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে বসানো হয়েছিল প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ৬টি এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেট। তবে মাত্র দুইমাস কার্যকর থাকার পর প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত এই ই-গেটগুলো অর্ধযুগ ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হলেও, এসবের খোঁজ রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রবেশমুখে তিনটি করে মোট ৬টি এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেইট বসানো হয়। স্মার্ট আইডি কার্ড ব্যবহারকারীদের যাতায়াতের বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বসানো হয়েছিলো এসব উন্নত মানের প্রবেশাধিকার গেট।

কেবল স্মার্ট কার্ডধারীরাই এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ভর্তির সময় স্মার্ট আইডি কার্ডের জন্য অতিরিক্ত চারশত টাকা ফি প্রদান করে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না। উন্নত প্রবেশাধিকার গেটগুলো বসানোর মাস-দুয়েক না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে। ব্যয়বহুল দামে ক্রয় করা এসব মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার অর্ধযুগ পার হলেও সেদিকে নজর নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মিজান উদ্দিনের সময়কালে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয়েছিল ছয়টি ই-গেইট। যার বর্তমান মূল্য কোটি টাকারও বেশি।মেশিনগুলো ব্যবহার করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রচলন করেন তাৎকালীন প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট কার্ড চালু করতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ব্যয় করতে হয়েছিল নির্দিষ্ট অঙ্কের একটি অর্থ; যার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সম্পদ নষ্ট হওয়ার পেছনে প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বন্ধ রয়েছে উন্নত মানের প্রবেশাধিকার গেটগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে এসব গেট থাকা খুবই প্রয়োজন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন যারা নিয়মিত অফিস করেন না; গেটগুলো সচল থাকলে তাদের যথাযথ উপস্থিতি সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিরাপত্তার জন্য ক্রয়করা আধুনিক সরঞ্জাম এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে, পুরনো সরঞ্জামগুলো পুনরায় চালু করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনেও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা অতীব জরুরি। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আলমগীর হোসেন সরকার ই-গেটগুলোর প্রসঙ্গে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম প্রবেশাধিকার গেটগুলো থাকা খুবই প্রয়োজন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিয়মিত অফিসে আসার যাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকবে। কিন্তু এতো দামে ক্রয়কৃত গেইটগুলো এভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকাটা কাম্য নয়।”

এদিকে, আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. খাদেমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “মেশিনগুলো অনেকদিন যাবত ব্যবহার হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অনুমতি দিলে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেটগুলো আবারও সচল হতে পারে বলে।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে এগুলোকে চালু করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। আধুনিক গেটগুলো দীর্ঘদিন পরে থাকার ফলে এখন কি অবস্থায় আছে সেগুলো আগে দেখতে হবে। প্রবেশাধিকার গেইটগুলো অকার্যকর হওয়ার পিছনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত অবহিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ