26 C
আবহাওয়া
১০:০৮ অপরাহ্ণ - মে ৩১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার চট্টগ্রামে, আলাদা করার নজির দৃষ্টি

যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার চট্টগ্রামে, আলাদা করার নজির দৃষ্টি


বিএনএ, চট্টগ্রাম: মা সুরাইয়া বেগমের কণ্ঠ কেঁপে উঠছিল— “মনে হয়েছিল মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু আজ আমি দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসতে পারছি।”

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার এই মা জন্ম দিয়েছিলেন জোড়া লাগানো যমজ সন্তান—রিয়াশাদ ও রেনিশকে। বুক ও পেটের আড়াই ইঞ্চি অংশ, এমনকি শ্বাসনালির কিছু জায়গাও একসঙ্গে যুক্ত ছিল। জন্মের ২৩ ঘণ্টার মাথায় চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারে দুই শিশুকে আলাদা করা হয়।

এখন তারা দুজনেই সুস্থ। এটাই চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে পৃথক করার ঘটনা। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ের ভেতরে সম্পন্ন হওয়া এমন একটি অপারেশন।

এই ব্যতিক্রমী ও সাহসী অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদ। তিনি বলেন, “এটা আমার ক্যারিয়ারের প্রথম স্বাধীন নেতৃত্বে করা অপারেশন। ঢাকায় রিফা-শিফার সময় আমি ছিলাম সহকারী পর্যবেক্ষক। এইবার পুরো দায়িত্ব আমার কাঁধে। ১৮ জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম তিন ঘণ্টা ধরে অপারেশন করে।”

অপারেশনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শ্বাসনালির অংশও এক ছিল। এর মানে একটু ভুল মানেই দুই নবজাতকেরই জীবন সংকটে পড়তো। কিন্তু আমরা সফল হয়েছি।”

গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে দুই শিশুর শরীর সংযুক্ত। গর্ভকালীন চিকিৎসায় একজন শিশুর রক্তপ্রবাহ সঠিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশেষে ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটির—ওজন ছিল মাত্র ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে।

প্রসূতিবিশেষজ্ঞ ডা. রেশমা শারমিন বলেন, “গর্ভকাল থেকেই পরিবারটি ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেক ধাপে পাশে থাকতে।”

শিশুদের বাবা রিয়াজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, “অনেকেই বলেছিলেন সন্তানদের বাইরে নিয়ে যান। কিন্তু আমরা চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। এখন বুঝছি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী, সিইও হেলাল উদ্দিনসহ চিকিৎসক ও অবেদনবিদ দল।

একটা সময় যমজ শিশুদের জোড়া লাগানো মানেই ছিল মৃত্যু। আজ সেই দুঃস্বপ্নকে জয় করে সুরাইয়া ও রিয়াজের ঘরে ফিরেছে দুটি আলাদা প্রাণ—একসঙ্গে বেড়ে ওঠার জন্য। তবে স্বতন্ত্র ভাবে অনেক তথ্য উপাত্তের যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ