বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে এক বছর আগে হারানো একটি অপ্পো এ-১২ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে গিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ১১ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী থানার এএসআই মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন একটি অভিযোগ করেছেন কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামের মো. জামান ও তাঁর পরিবার। মো. জামান পেশায় একজন সাম্পান মাঝি। বর্তমানে হার্টের রোগী বলে স্ত্রী বিউটি বেগমের দাবি।
অন্যদিকে, বর্তমান সময়ে জিডি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে সারাদেশে বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তা প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ পুলিশ বেশ সুনাম অর্জন করলেও কর্ণফুলীতে হারানো এই ফোনটি উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ মার্চ কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামের (ওয়ার্ড নং-৯) মো. জামানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি (২৪) অপ্পো এ-১২ নামক একটি ফোন হারানোর জিডি করেন সিএমপি’র কর্ণফুলী থানায়। যার সাধারণ ডায়েরী (জিডি) নং হলো-৩৮৯।
দীর্ঘদিন পর কর্ণফুলী থানার এএসআই মো. জাকির হোসেন গত ২৮ এপ্রিল রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইলটি খোয়াজনগর গ্রামের আজিমপাড়া পোস্ট অফিস সংলগ্ন নাছিরের ভাড়া ভবন থেকে ফোনটি উদ্ধার করেন। যার কাছে মোবাইলটি পাওয়া যায় তার নাম বাহাদুর (১৭)। সে আয়ুব বিবি স্কুলের ছাত্র।
ছেলেটি পুলিশকে জানায়, ফোনটি সে গত এক বছর আগে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ইছানগর গ্রামের মো. জামানের ছেলে তামজিদ থেকে কিনেছেন। তামজিদ বাহাদুরের বন্ধু। একই স্কুলে পড়েন। কিন্তু পুলিশ এ কথা মানতে নারাজ। বাহাদুরের মাকে পুলিশ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে পুলিশ ওই ছাত্রসহ ফোনটি যার কাছ থেকে কেনা হয়েছে বলে দাবি করলেন তাঁর বাড়িতে গেলেন। গিয়ে দেখেন ঘটনা উল্টো। বিক্রেতার মা ফোনটি দেখে বললেন, ‘এটি তো আমাদের হারানো ফোন। যেটি উদ্ধারে ১৩ মাস ২০ দিন আগে জিডি করলেন।’
পরে তাৎক্ষণিক ফোনটির ১৫ ডিজিটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি বা আইএমইআই নম্বর ও পূর্বে করা জিডি পড়ে নিশ্চিত হন ফোনটি তাঁদেরই। তাহলে কী মো. জামানের ছেলে তামজিদই বাড়ি থেকে ফোনটি চুরি করে তাঁর একই স্কুলের সহকর্মী বাহাদুরের কাছে বিক্রি করেন।
এতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হলেও এএসআই মো. জাকির হোসেন জামানের ছেলেকে হাতকড়া পরিয়ে তার বাবা জামানকে (হার্টের রোগী) ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ৮ হাজার টাকা নেন। পরে মোবাইলটি নিয়ে থানায় চলে যান। বাহাদুরকে ছেড়ে দেন। যাবার সময় জামানের পরিবারকে বলে যান কাল যেন থানায় গিয়ে মোবাইল ফোন সংগ্রহ করে।
এমন তথ্যের কথা নিশ্চিত করেছেন মো. জামান, তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি।
ঘটনার পর দিন ২৯ এপ্রিল রাত ৭ টার সময় ভুক্তভোগী পরিবারটি মোবাইল নিতে থানায় যাবেন কিনা ফোন করেন এএসআই জাকির হোসেনকে। তিনি মুঠোফোনে জানান, ‘৫ হাজার টাকা নিয়ে থানায় যেতে।’
এ কথা শুনে পরিবারের লোকজন একে অপরকে বলতে লাগলো নিজেদের উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন নিতে গতরাতে ৮ হাজার টাকা নিয়ে গেল পুলিশ। এখন আবারো ৫ হাজার টাকা চায়। অভাবের সংসারে বিষয়টিতে বিব্রত হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমান সুমনকে পুরো ঘটনাটি জানান।
ইউপি সদস্য সুমন তাঁর আপন বড় ভাই শাহরিয়ার মাসুদকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেন। কেননা, মাসুদের সাথে থানা পুলিশের অনেকের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। পরে শাহরিয়ার মাসুদ এএসআই জাকিরকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ডিসি অফিসে আছেন বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন লাইন কেটে দেন।
এরপর রাত সাড়ে ৭ টার সময় মোবাইলটি নিতে মো. জামানের স্ত্রী বিউটি বেগম ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস থানায় যান। তাঁদের ভাষ্যমতে, পুনরায় ৩ হাজার টাকা নেওয়ার পর তাঁদেরকে অপ্পো ফোনটি ফেরত দেন এএসআই মো. জাকির।
একই সময়ে পুলিশ মো. জামানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টিকে (২৪) দিয়ে আরেকটি জিডি করান। যার জিডি নং-১৫৭৩।
ওই জিডিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘হারানো মোবাইল খানা কর্ণফুলী থানায় কর্মরত এএসআই মো. জাকির হোসেন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করতঃ প্রকৃত মালিক জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টিকে বুঝাইয়া দেয় বিধায় উক্ত জিডির বিষয়ে আর কোন অভিযোগ নাই এবং ভবিষ্যতেও এই সংক্রান্তে জিডি করিবনা, করিলে আইনের কোন ভিত্তি হইবেনা।’ কর্ণফুলী থানার ওই সময়ের ডিউটি অফিসার রিক্তা আলম জিডিটির প্রস্তুতকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
এ ঘটনাটি শুনে উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খোয়াজনগরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন,’ নাছিরের ভাড়া বাসায় পুলিশ যাওয়ার পর ঘটনাটি গতকাল রাতে শুনেছি। এমনকি অপ্পো ফোনটিও আমি দেখেছি। মনে হয় পুরাতন ফোন। বেশি জোরে বিক্রি করলেও ৫ হাজার টাকা যাবে। কিন্তু ৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ যদি ফোনের প্রকৃত মালিক থেকে উল্টো ১১ হাজার টাকা নেয় সেটা অমানবিক হয়ে যায়।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এএসআই মো. জাকির হোসেন বলেন, এসব মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে কিছু খরচ হয়।’ খরচ কত টাকা হয় এমন প্রশ্ন শুনে তিনি ব্যস্ত জানিয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন করেন।
কর্ণফুলী থানা পুলিশের ওসি মো. জহির হোসেন ও সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানাকে মুঠোফোনে কল ও হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিএনএনিউজ/ বিএম/ হাসনা