বিএনএ ডেস্ক : ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই নতুন দলের নেতৃত্বে থাকছে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল ঘোষণা করতে চায় গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন দল ঘোষণার আগে ২৪ দফার ইশতেহার তৈরিতে কাজ করছে তারা। এজন্য ১৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। তবে এখনো চুড়ান্ত করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক দল গঠনের আগেই ছাত্র, ব্যবসায়ি, আমলা, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয়ে অন্তত: ৩০ টি সেল গঠন করা হবে।
ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। আর আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রদের নতুন দল প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে। কমিটির সদস্যসচিব হবেন নাহিদ ইসলাম।
সম্প্রতি ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে রেখে তাদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে আসলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এরপর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন। এ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলনের শুরু থেকে প্রথম সারিতে নেতৃত্বে ছিলেন নাহিদ ইসলাম। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের এক দফার ঘোষক। ছাত্র-জনতার কাছেও তিনি অনেক জনপ্রিয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ, আহত এবং জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবেন। তাই সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান থাকবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সাড়া দিয়ে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে তারা যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্য মতামত দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা এক বা একাধিক ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত। সাধারণ মানুষের কাছে যেসব ছাত্র উপদেষ্টার গ্রহণযোগ্যতা বেশি তাদের পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়ে নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন।
তবে ছাত্র উপদেষ্টাদের কে বা কারা পদত্যাগ করবেন তা চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে একটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা সরকারে থাকবে তারা রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারবে না। এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে হলে অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে আসতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার পরপরই জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত একটি লংমার্চ কর্মসুচীর পরিকল্পনা রয়েছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জনশক্তি’ এখনো খসড়া তালিকায় রয়েছে। নাম চুড়ান্তের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়করা মনে করেন, বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা অধীর আগ্রহে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। যেভাবে ফ্যাসিস্ট-খুনি হাসিনাকে নামিয়েছে, তেমনিভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসর ও সহযোগীদের তাড়িয়ে মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠন করবে ছাত্রদের নতুন এই রাজনৈতিক দল।
বিএনএ নিউজ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী