বিএনএ, চট্টগ্রাম : ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণে ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় এবারের বই মেলা অনুষ্ঠিত হবে এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামস্থ জিমনেসিয়াম চত্বরে।
এবারই প্রথমবারের মতো ২৬ দিন ব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জিমনেসিয়াম চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মেয়র বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য জন্য বইমেলা উন্মুক্ত থাকবে। এবারের বই মেলায় চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার সৃজনশীল অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে এবং তাদেরকে স্টলও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় প্রায় এক লক্ষ বর্গফুটের সুবিশাল জিমনেসিয়াম মাঠ জুড়ে মোট ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের স্টল সংখ্যা ৭৪টি ও ঢাকার স্টল সংখ্যা ৪৪টি। মেলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সার্বিক সহযোগিতায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সমগ্র মেলা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। আমরা আশা করছি এবারের বইমেলা অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি লেখক-পাঠক সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
এবার মেলা প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার’, থাকবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে। মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য ও ছাত্র সমন্বয় উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন।’
তিনি জানান, মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুল,লোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোক নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। আমরা আশা করি এই মেলায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লেখক-পাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মননের উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে। এবং জাতীয় জীবনে যেসব ব্যক্তি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে।
মেয়র বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় থাকছে- নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও সেলফি কর্নার। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার আন্দোলনের উপর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে ঢাকার পর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীই শুধু নয়, বাণিজ্যিক রাজধানীও। চট্টগ্রামের লেখক-প্রকাশক-পাঠক এবং নাগরিক সমাজের দীর্ঘকালের আকাঙ্ক্ষা ছিল ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজনের। সম্মিলিত উদ্যোগে একটি বইমেলার আয়োজন ছিল চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই আজকাল মোবাইলে ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই অন্যতম বন্ধু যা তাদের মোবাইল ও মাদকের আসক্তি থেকে বের করে সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা, শিক্ষক ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা আমাদের ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।’
বিএনএনিউজ/ বিএম/শাম্মী
