ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ : প্যারিস চুক্তিতে ইসরাইল সম্মত, হামাস নীরব
ফ্রান্সের রাজধানীতে ৩/৪ টিদেশের মতবিনিময়ের পর সোমবার(২৯জানুয়ারি ) প্যারিস সম্মেলনের সম্মতি অনুযায়ী ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। খবর আল জাজিরার। কাতার,মিশর, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।কাতারের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব হামাসের নিকট পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের আশ্রয় নেয়া জাতিসংঘের একটি স্কুলে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার জানিয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত
আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের ফিলিস্তিনি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত রাতে আল-রিমাল পাড়াকে লক্ষ্যবস্তু করে বিমান হামলা এবং কামান থেকে ব্যাপক বোমাবর্ষন করেছে।
গাজা ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৯০ জন আহত হয়েছে। ইসরাইলী সেনাদের সড়ক অবরোধ ও বাধার কারণে “অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না,”
গাজা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত: রিপোর্ট
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় হামাদা পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে অন্তত ২৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি ড্রোনগুলি উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত নজরদারি চালাচ্ছে, স্থানীয় সূত্র ওয়াফাকে জানিয়েছে।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হাজার ৬৩৭
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬৫হাজার৩৮৭ জন আহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন পর নিহতের আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্যারিস চুক্তি
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি বিবৃতি জারি করেছে,জিম্মি মুক্তির জন্য একটি কাঠামোতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে না, তবে বলে যে “এই চুক্তি সম্পর্কে প্রতিবেদনগুলি সঠিক এবং ইসরায়েলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন শর্তগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
ইসরাইলী মিডিয়া চ্যানেল ১২ রিপোর্ট করেছে, ইসরায়েল প্রথম পর্বে ৩৫ জন জিম্মির বিনিময়ে ৪৫ দিনের যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি জিন্মিকে ইসরায়েলে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রায় ১০০-২৫০ ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, “আমরা সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।”
সোমবার হোয়াইট হাউস বলেছে যে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের একটি নতুন মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আলোচনা গঠনমূলক এবং প্রতিশ্রুতিশীল ছিল, তবে এখনও অনেক কাজ রয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস এবং মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত ব্রেট ম্যাকগার্ককে জড়িত করে একাধিক আলোচনায় জিম্মিদের মুক্তির পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে একটি মানবিক বিরতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি সিএনএন-এ বলেছেন, “আমি মনে করি তাদের গঠনমূলক বলে বর্ণনা করা ন্যায়সঙ্গত।”
“আমরা মনে করি এখানে আরেকটি জিম্মি চুক্তির জন্য একটি কাঠামো রয়েছে। এটি আরও জিম্মিকে বের করে আনা, আরও সাহায্য পাওয়া এবং প্রকৃতপক্ষে সহিংসতা হ্রাস করার ক্ষেত্রে একটি ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে।”
হামাসের প্রতিক্রিয়া নেই
তবে প্যারিস চুক্তির ব্যাপারে হামাসের কোন প্রতিক্রিয়া সোমবার পাওয়া যায় নি।
ফিলিস্তিনি মহিলারা প্লাস্টিকের তাঁবুতে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন: এমএসএফ
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে যে গাজার বাস্তুচ্যুত মহিলারা পাবলিক বিল্ডিং এবং তাঁবু সহ শোচনীয় পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন এবং সন্তান প্রসব করছেন।
“যারা হাসপাতালে ডেলিভারি করতে পারে তারা প্রায়ই সিজারিয়ান [সেকশন] করার কয়েক ঘন্টা পরে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ে ফিরে আসছে,” এমএসএফ জানায়।
তেলআবিবে হামাসের কয়েকদফা রকেট হামলা
ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবে সোমবার হামাস কয়েকদফা রকেট হামলা চালিয়েছে। এ সময় তেলআবিবে রকেট হামলার সাইরেন বাজানো হয়। এতে তেমন কোন ক্ষতি হয় নি বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
ছবি : আল জাজিরার সৌজন্যে
গাজার খান ইউনিস শহর থেকে দলে দলে ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণের শহর রাফার দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলী সৈন্যরা খান ইউনিস শহরের বাসিন্দাদের এর আগে শহর ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি এবং বার্ন বিভাগের প্রধান আহমেদ মোগরাবি আল জাজিরা প্রতিনিধিকে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতির একটি আপডেট দিয়েছেন। সোমবার(২৯ জানুয়ারি) ফিলিস্তিনি চিকিৎসক যা বলেছেন:
আমি খুব কাছ থেকে [ইসরায়েলি] বোমাবর্ষণ শুনতে পাচ্ছি। সারাক্ষণ বিল্ডিং কাঁপছে। জানালা থেকে কাচ ভেঙে পড়েছে। আমরা জানালা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছি।
আমার বিশেষত্ব, প্লাস্টিক এবং পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচারে আমি এখানে একমাত্র সার্জন। আমাদের কাছে মাত্র দুই বা তিনজন অর্থোপেডিক ডাক্তার এবং দুইজন জেনারেল সার্জন আছে – এইটুকুই – যদিও এখানে কোন চিকিৎসা সরঞ্জাম , খাবার বা বিশুদ্ধ পানি নেই।
আমি আমার পরিবারকে বলেছি – তারা আমার সাথে হাসপাতালে থাকে – আমি তাদের বলেছিলাম বেশি খাবেন না। আপনি যদি দিনে একবার খেতে পারেন তবে দয়া করে তা করুন।
যদি ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতাল এলাকা থেকে সরে না যায়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। রোগীরা মারা না যাওয়া পর্যন্ত তাদের বিছানায় থাকবে। এটি একটি মৃত্যুদণ্ডের সাজার মতো। আমাদের প্রধান আইসিইউতে অনেক রোগী আছে, যাদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। সঠিক যত্ন না নিলে সবাই মারা যাবে।
বিএনএ,এসজিএন