বিএনএ, চট্টগ্রাম: ‘শনি’ যেন পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম ক্লাবের চেয়ারম্যান নাদের খানের। গেল বছর মহল্লার মসজিদে আজান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি লিখিত আপত্তি জানিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন নাদের খান। এ ঘটনায় তিনি ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। কিন্তু এবার বন ও পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে জলাশয় খনন করার দায়ে মামলার আসামি হলেন নাদের খান।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাতে ভূজপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন নারায়ণহাট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন ফারুকী। তিনি বলেন, হালদা ভ্যালি চা বাগানের ভেতর টিলা কেটে ও সরকারি জমির মাটি খনন করার অভিযোগে নাদের খানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জানা যায়, রোববার (২৯ জানুয়ারি) হালদা ভ্যালি চা বাগানের অভ্যন্তরে অবৈধ ভাবে টিলা কেটে জলাশয় খননের খবর পেয়ে হালদা ভ্যালি চা বাগানে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রাহমান সানি। এসময় টিলা কাটা প্রমানিত হওয়ায় বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মহসিনকে এক বছর এবং এস্কেভেটর চালক গৌতমকে এক মাসের সাজা দেন ভ্রাম্যমান আদালত। রাতে একই অপরাধে বাগান মালিক শিল্পপতি নাদের খানের বিরুদ্ধে ভূজপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এরআগে গেল বছরের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার মহল্লার জামে মসজিদে উচ্চস্বরে আজানের আওয়াজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি লিখিত আপত্তি জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তাঁর স্ত্রী হাসিনা খাঁন। তাদের এই আপত্তিতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ধর্মীয় উস্কানিমূলক কর্মকান্ড ও অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি (ডিজি) করেছেন পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা খুলশি থানাধীন পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করেন শিল্পপতি নাদের খাঁন। জানা গেছে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি এই এলাকার শাহী জামে মসজিদে আযানের সময় উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ করে আসছিলো এবং মসজিদ কমিটি ও ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলম বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন নাদের খাঁন ও হাসিনা খাঁন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন ,আপনার নিকট ও মসজিদ কমিটির সম্মানিত নেতৃবৃন্দের নিকট বারবার অনুরোধ করে এই পর্যন্ত শোনার ও বুঝার চেষ্টা করছেন না আমাদের এই এলাকায় একই সাথে ৮ থেকে ৯টি মসজিদ হইতে আযান শোনা যায়। অথচ আপনারা কেউ কেউ এ কথা ও বলছেন যে আপনারা যেহেতু দূরে থাকেন, শোনার সুবিধার জন্য মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে রাখেন। এই বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।
দরখাস্তে আরো লেখা হয়, শুক্রবারে মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়, আপনাদের কে অনুরোধ করছি এই আওয়াজ আপনারা মসজিদের ভিতরে রাখেন কিন্তু এই পর্যন্ত তাও হলো না। অনেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন, শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অসুবিধা হতে পারে। অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা বিকট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায়না। মসজিদুল হারাম, মসজিদুল নববী এই সকল মসজিদে মাইক ব্যবহার হচ্ছে কিনা খবর নেন। আপনারা যদি আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন, তবে সব ধরনের সহযোগিতা থেকে আমরা বিরত থাকবো।
এমন অভিযোগ করার কথা জানাজানি হওয়ার পরে পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক অহিদ চৌধুরী মুক্তি এ নিয়ে খুলশী থানায় জিডি করেন। (জিডি নং-১১৬৫) । গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর দায়ের করা অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, এলাকাবাসী ও মসজিদের মুসল্লিগণ নাদের খাঁন ও তাঁর স্ত্রী হাসিনা খাঁনের ওপর খুবই ক্ষুদ্ধ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
বিএনএ/এমএফ