রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই নেই! পরিবেশ, পরিস্থিতির ওপর ভর করে তারা কথা বলেন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও তার জোরালো বিরোধীতা করে যাচ্ছে জামায়াত ইসলামী। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিএনপি থেকে মূখ ফিরিয়ে নিলেন গণ অধিকার পরিষদ। অথচ কিছুদিন আগেও গণ অধিকার পরিষদ বিএনপির’র সূরে সূরে কথা বলেছেন। কিন্তু হালে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন গণ অধিকার পরিষদ।
২৮ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমি মনে করি যে এই সরকারের ন্যূনতম ২ বছর থাকা দরকার। এখন যদি এক বছর ছয় মাসের মধ্যে একটা নির্বাচন হয়, তাহলে আপনাদের কি মনে হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে? এখন যারা ক্ষমতায় আসার মতো সম্ভাব্য দল রয়েছে, আমরা দেখেছি অতীতেও এই দলগুলো ক্ষমতায় ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড ও চরিত্র দেখেছি। রাতারাতি তো এই চরিত্রের বদল হবে না।
নুরুল হক নুর বলেন, দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রয়োজন, যারা রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন এনে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। এনজিও মার্কা চেহারা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের পরিধি বাড়িয়ে বিভিন্ন দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি ‘ইনক্লুসিভ’ সরকার গঠন করা উচিত। অর্থাৎ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার মাধ্যমে রাস্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে চায় গণঅধিকার পরিষদ।
এদিকে শনিবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, বর্তমান সরকারের ভেতরে সুবিধাবাদীরা ঢুকে গেছে, এই সরকার নিয়ে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব নয়।
সভায় নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই সরকারে যারা আছে তাদের কয়জন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব ছিল? অথচ যারা রাজপথে ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এই সরকার পতনের আন্দোলন একদিনে হয়নি, গত কয়েক বছর ধরে এর পটভূমি রচিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আন্দোলন না হলে ২৪ সালে এই আন্দোলন হতো কি না সন্দেহ। এই আন্দোলনের সামনের সারির অনেকেই আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ছিল, তাই বলে আমরা নিজেদের মাস্টার মাইন্ড দাবি করতে পারি না। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘এখন হুট করে নির্বাচন দিলেই বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। কারণ অনেকের অনেক ক্ষুধা রয়েছে। ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক যে যোগাযোগ রয়েছে, যেভাবে বিশ্বনেতারা তাকে সম্মান করেন, এটা আমাদের গর্ব। তার ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে, কিন্তু আশঙ্কা তার চারপাশের লোকদের নিয়ে। দেশের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা চালু করতে হবে।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত ষড়যন্ত্র করছে। পাহাড়িদের ভারত উসকানি দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সনাতন ধর্মের লোকেরা পূজা পালন করতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা হামলা করে বিশ্বকে দেখাতে পারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে।’
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/এইমুন্নী