29 C
আবহাওয়া
১:১৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯০ (ঢাকা-১৭)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯০ (ঢাকা-১৭)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯০ (ঢাকা-১৭)

বিএনএ, ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-১৭ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা- ১৭ আসন

ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ড এবং ঢাকা সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। এই আসনটি গুলশান, বনানী, বারিধারা নামে পরিচিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৯০ তম আসন।

২০০১ সালের বাংলাদেশ আদম শুমারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে। তখন থেকে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনটি সৃষ্টি করা হয়।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬২ হাজার ১ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৭ শত ২৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৪ হাজার ১ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম হান্নান শাহ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ২ শত ৮৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বি এন এফ এর এস এম আবুল কালাম আজাদ বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯০ হাজার ২ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৫২ হাজার ৪ শত ৪ জন। নির্বাচনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বি এন এফ এর এস এম আবুল কালাম আজাদ বিজয়ী হন। টেলিভিশন প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ৫ শত ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ হান্নান মৃধা। ফুটবল প্রতীকে তিনি পান ৪ হাজার ৪৬ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬ শত ৮৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক), ধানের শীষ প্রতীকে ২০দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর এ এক এম সাইফুর রশিদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আমিনুল হক তালুকদার, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির কাজী মো: রাশিদুল হাসান, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক দল পিডিপ’র আলী হায়দার, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশেনালিস্ট ফ্রন্ট বি এন এফ এর এস এম আবুল কালাম আজাদ,মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর এস এম আহসান হাবিব এবং সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬ শত ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিভ রহমান পার্থ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৮ হাজার ৬ শত ৩৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

২০২৩ সালের ১৪ মে ঢাকা-১৭ আসনের সাবেক সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক মৃত্যুবরণ করেন। ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত সমালোচিত উপনির্বাচনে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। অংশ নেয়নি বিরোধীদল বিএনপি।
আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম। যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১.৫১ শতাংশের মতো। এই নির্বাচনে সর্বমোট ভোট পড়েছে ৩৭ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে ৩৮৩টি ভোট বাতিল বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার প্রার্থীতা অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জসিম উদ্দিন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ সংসদের প্রার্থী ২০দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তার মনোনয়নও নিশ্চিত।জাতীয় পার্টি থেকে মনোনযন চাইবেন বিদিশা এরশাদ।তার সঙ্গে রওশন এরশাদের সু সম্পর্ক রয়েছে।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ আসনটিকে বলা হয় এলিট আসন। অভিজাত ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক শীর্ষ এলিটদের বসবাস এই আসনে। এছাড়া কূটনৈতিক মিশনগুলো এই সংসদীয় এলাকায়। এখানকার ভোটররা অন্য আসনের চেয়ে বেশি সচেতন ও অগ্রগামি।

প্রথম থেকে অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বর্তমান ১৭ সংসদীয় আসনটি ঢাকা ৫ এর অংশ ছিল। ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের কাজী মোজাম্মেল হক। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির প্রার্থী ডা. আ. রউফ। ১৯৮৬ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এ কে এম রহমতউল্লাহ এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।পরে খালেদা জিয়া ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিএনপির কামরুল ইসলাম সংসদ সদস্য হন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে নৌকা প্রতীকে জয় পায় জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এ কে এম রহমতউল্লাহ। ২০০৮ সালে সীমানা পুনঃনির্ধারণের পর ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় আ স ম হান্নান শাহ্কে। আসনটিতে মহাজোটের এইচ এম এরশাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে এরশাদের মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ হান্নান মৃধাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন বিএনএফ’র আজাদ।

এই আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান রয়েছে এই আসনে। তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রয়েছে সাংগঠনিক সক্ষমতা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা বেশ দৃশ্যমান। বিএনপির এই আসনে সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান না হলেও ঢাকার সবচেয়ে বড়বস্তি কড়াইলসহ আশেপাশে সাধারণ ভোটারদের বড় অংশ বিএনপির সমর্থক। মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির স্বর্গ রাজ্যখ্যাত এই কড়াইল বস্তির ভোটাররা নির্বাচনে জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৯০তম (ঢাকা-১৭) সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগ খুব সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৯ (ঢাকা-১৬)

Loading


শিরোনাম বিএনএ