বিএনএ, কুবি: যৌন হয়রানি, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও মানসিক নির্যাতনসহ অনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত শিক্ষককে দিয়েই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল’ (আইকিউএসি)। সোমবার (২৯ আগস্ট) এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে গণমাধ্যমে ‘যৌন হয়রানির অভিযুক্ত ঢাবি শিক্ষক দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রোগ্রামটি স্থগিত করেছে আইকিউএসি।
আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর (বিশেষজ্ঞ বক্তা) বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। আমাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার ছিলো তথ্য যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রে। প্রোগ্রামটি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
তবে কর্মশালা কবে হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই কর্মশালা। এটি অবশ্যই আমরা পুনরায় আয়োজন করবো। তবে একজন গবেষক খুঁজে আবার উনাকে সময় দিতে প্রায় ১৫-২০ দিন সময় লাগে।
জানা গেছে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘কোভিড ১৯ মহামারী: করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয় ও প্রতিকার’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলো কুবির আইকিউএসি। প্রশিক্ষণের ‘রিসোর্স পার্সন’ বা বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমানকে।
অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২০ জুন দুর্নীতি ও বিভিন্ন অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকাসহ ১২টি অভিযোগ এনে তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ও অভিযোগগুলোর বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন শিক্ষক। বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করে তা তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে ঢাবি উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ করেন তাঁরা। সবশেষ চলতি মাসের ২৪ তারিখ কামাল উদ্দিনের দুর্নীতি ও অন্যান্য অনিয়ম সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে আবারও উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ঢাবি সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রমাণিত হলে কামাল উদ্দিনকে এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনের ওপর অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম। এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তাঁদের চিঠিতে উল্লেখিত অভিযোগ ছাড়াও অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের একজন বিদেশী নারী শিক্ষার্থীর সাথেও একই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তাকে সেখানকার অতিথি শিক্ষকের পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরকম একজন ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিষয়ক প্রশিক্ষণের বিশেষজ্ঞ বক্তা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘এরকম একজন ব্যক্তি কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার নারী শিক্ষার্থীদের সাথেও তার পরিচয় ঘটবে এবং যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণটির আরেকজন বিশেষজ্ঞ বক্তা হলেন সৈয়দ তানভীর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সমর্থিত সাদা দল থেকে নির্বাচন করেন। সবশেষ ২০২২ সালের নির্বাচনে সাদা দল থেকে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন তিনি। শোকের মাস আগস্টে সাদা দলের প্রতিনিধিকে দিয়ে প্রশিক্ষণ করানোর বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানের প্রতি অশ্রদ্ধা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বঙ্গবন্ধু পরিষদ একাংশের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যেহেতু প্রোগ্রামটি হয়নি আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যদি হতো তাহলে বলতাম এটা ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি এ বিষয়ে আয়োজকদের সতর্ক থাকা ও আরও খোঁজ খবর নেয়া উচিত ছিলো।
এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটি লেখার আগে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিএনএ/ হাবিবুর রহমান, ওজি