বিএনএ,চট্টগ্রাম: ২৬ দিন কারাভোগের পর অবশেষে ৯ মাসের শিশুসহ জামিনে মুক্তি পেলেন রোহিঙ্গা যুবকের বৈবাহিক প্রতারণার শিকার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সিরাজ খাতুন (৩০)। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান। তিনি বলেন, ‘জামিননামায় স্বাক্ষর না পাওয়ায় জামিনযোগ্য ধারায় সিরাজ খাতুন এবং তার দুগ্ধপোষ্য নয় মাসের শিশু গত ২৬ দিন ধরে হাজতবাস করছেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার তার জামিননামায় স্বাক্ষর করার পর কারামুক্ত হন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি নারী হয়েও রোহিঙ্গা স্বামীর প্রতারণার কবলে পড়ে সিরাজ খাতুন কারাভোগ করেছেন। তিনি প্রতারণার শিকার। আমরা এই মামলা থেকে সিরাজ খাতুনকে খালাস দেওয়ার আবেদন করবো।’
কারাগার থেকে বের হয়ে সিরাজ খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমি বার বার বলেছি- আমি বাংলাদেশি, আমার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া। আমি বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র, জাতীয়তা সনদপত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখালেও তারা আমার কথা শোনেনি। উল্টো আমার সব কাগজপত্র নিয়ে আমাকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। আমি এখন না বাংলাদেশের নাগরিক, না রোহিঙ্গা। আমি আমার সব কাগজপত্র ফেরত চাই। আমি একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই।
এর আগে গত ১৬ জুন সিরাজ খাতুনকে জামিন দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতের বিচারক মেহনাজ রহমান। মামলায় অভিযুক্ত মা ও শিশুকে বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সিরাজ খাতুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের মেয়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার যাবতীয় কাগজপত্র আছে। এক দশক আগে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিক আহমদের প্রেমে পড়েন তিনি। এরপর তাকে পালিয়ে বিয়েও করেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বসবাস করতে থাকেন ওই নারী। একপর্যায়ে ২০১৮ সালে পুলিশের হাতে আটক হন সিদ্দিক ও সিরাজ খাতুন। এ সময় এই দম্পতিকে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠায় পুলিশ। এরপর ভাতা পাওয়ার লোভে সিরাজ খাতুনকে ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে ক্যাম্পে নিবন্ধন করেন তার স্বামী। সিরাজ খাতুনের নাম সালমা খাতুন দিয়ে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় মো. ইসহাক।
কিছুদিন ক্যাম্পে থাকার পর স্বামী ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেলে রাঙ্গুনিয়া ফিরে আসেন সিরাজ খাতুন। এরপর আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে ওমানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এজন্য তিনি গত ৩ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসে পাসপোর্ট করাতে যান। পাসপোর্ট অফিসে সিরাজ খাতুনের আঙুলের ছাপ যাচাই করে তাকে রোহিঙ্গা নারী ‘সালমা খাতুন’ হিসেবে শনাক্ত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে ৯ মাসের শিশুসন্তানসহ নগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় পাসপোর্ট অফিস। সেখান থেকে পুলিশ পরদিন (৪ জুন) তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। ওইদিন আদালত সিরাজ খাতুনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিএনএনিউজ/মনির