বিএনএ, ডেস্ক: বছর ঘুরে আবারও উপস্থিত পবিত্র ঈদুল ফিতর। অপেক্ষা এখন কেবল নতুন চাঁদের। আসন্ন এ ঈদকে সামনে রেখে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যান অনেকেই। পরিবারের সঙ্গে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। তবে ঈদের এ আনন্দ নষ্ট হতে পারে শরীর খারাপ কারার জন্য। তাই ঈদ আনন্দের পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে স্বাস্থ্যরও।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ঈদে সুস্থ থাকতে কী করা যেতে পারে-
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ সবার জন্য খুশির বার্তা বয়ে আনে। উৎসব মানেই খাওয়-দাওয়া আনন্দ করা। আর সেই উৎসব যদি হয় ঈদ তাহলে ত কথায় নাই। খাওয়া-দাওয়ার সাথে ঘুরাঘুরি ও বাহারি পোশাকের সমাহার। তবে রমজান মাসে যেহেতু ভিন্ন এক রুটিনে মানুষ অভ্যস্থ হয় তাই দীর্ঘ এক মাসের রুটিন বদলে হুট করে নানা রকম ভারী খাবার খাওয়া অস্বাস্থকর হয়। বছর ঘুরে এক এক মৌসুমে এ ঈদ উদ্যাপন হয়। যেমন- এবার চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হতে পারে। সেই হিসেবে এবার ঈদে বেশি গরম অনুভূত হতে পারে। তাই এ গরমে শরীরের নিতে হবে বিশেষ যত্ন। তা না হলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা। ভেস্তে যেতে পারে ঈদের আনন্দ।
এবার ঈদে তাপমাত্রা বেশি থাকায় শরীরকে চাঙা রাখতে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে পানি। পানি খেতে হবে যাতে শরীরে হাইড্রেশন ঠিক থাকে। আর অন্যন্যা খাবারেও প্রতি রাখে হবে বিশেষ খেয়াল। এক মাস সিয়াম পালনের পর হুট করে অতিরিক্ত বা বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তেল-মসলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে বুক জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি, বদহজম হতে পারে। তাই খুব তেল মসলাযুক্ত, ঝালজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। একেবারে লাগামহীন খাওয়াদাওয়া আর গরম আবহাওয়ায় অসতর্ক ঘোরাঘুরিতে হুট করেই মাটি হয়ে যেতে পারে ঈদের আনন্দ।
ঈদের আনন্দের পাশাপাশি ঈদের খাদ্য তালিকায়ও রাখতে হবে বিশেষ নজর।
ঈদের দিনে তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে বেশিরভাগেরই। তবে উৎসবের আনন্দে শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়াও জরুরি। খাবারে ঘি বা অতিরিক্ত তেল কমানো, মাংস রান্নার সময় চর্বি বাদ দেওয়া। বিশেষ করে গরু বা খাসির মাংস পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। এক মাস রোজার কারণে শরীর নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই হঠাৎ ঈদের দিনে অতিরিক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উৎসবের আয়োজনে ভারসাম্য রাখা জরুরি।
এক মাস একধরনের খাদ্যাভাসের সাথে মানুষ পরিচিত হয়। হুট করেই ঈদের দিন অতিরিক্ত তেল-ঝাল খাবার আপনার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই কম তেল ও কম মসলায় রান্না করা খাবার দিয়েই শুরু হতে পারে ঈদের দিনের খাবার দাবার। এছাড়া শরবত বা নানান রকম পানীয় বানাতে পারেন ঘরেই। সেক্ষেত্রে ফলের স্মুদি খুবই স্বাস্থ্যকর পানীয়। অতিথি আপ্যায়নেও স্মুদি দারুণ এক উপকরণ। তাছারা জিরাপানি খেতে পারেন, যা বদ হজম দূর করবে। অবশ্যই কোমল পানীয়, প্যাকেটজাত পানীয় বা প্যাকেটজাত গুঁড়া দিয়ে তৈরি পানীয় এড়িয়ে চলুন। একবারে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার সময় পানি খাবেন না। খাবার খাওয়ার ১৫–২০ মিনিট পর পানি বা পানীয় খাবেন। খাওয়ার আগে পানি বা পানীয় খেতে চাইলে সেটিও ১৫-২০ মিনিট আগে। অতিরিক্ত রোদে বেড়াতে গেলে সঙ্গে পানি বা পানীয় নিন।
ঈদের দিন আরামদায়ক পোশাক পরুন। এমন কাপড় বেছে নিন, যার মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। এমন রঙের পোষাক পড়ুন যেটা তাপ কম শোষণ করে। শিশুদের জন্য বাড়তি যত্ন নিন। শিশুরা রঙিন পোষাক পছন্দ করে তাই তাদের পছন্দের প্রতি খেয়াল রেখে এমন কাপড় বাছাই করুন যাতে তারা স্বস্থিতে থাকতে পারে। বাছাইয়ে ভারী মেকআপ ও গয়না পরিবর্তে হালকা মেকাপ ও গয়না বেছে নিতে পারেন, তাতেই স্বস্তিতে থাকবেন। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন। তাছাড়া ত্বককে সজীব রাখতে সানস্ক্রিন ও চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
সব মিলিয়ে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হলে খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাসে ভারসাম্য রাখা জরুরি। অতিরিক্ত তেল-মসলা এড়িয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং রাতের খাবার হালকা রাখার অভ্যাস শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। পাশাপাশি, গরমের দিনে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া যেমন—ছাতা ও পানির বোতল সঙ্গে রাখা, সময়মতো খাওয়া এবং হজমের জন্য পর্যাপ্ত বিরতি দেওয়া—সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মাধ্যমে ঈদের উৎসবকে উপভোগ্য ও শরীরবান্ধব করে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিএনএনিউজ/ বিএম