বিএনএ, চবি: আগামীকাল (৩০ মার্চ) অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডিন নির্বাচন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করেছেন আইন অনুষদের অধ্যাপক জাকির হোসেন। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্য ও চবি আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের প্রার্থিতাকে ঘিরে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসানকে দেয়া এক চিঠিতে এই তথ্য জানিয়েছেন অধ্যাপক জাকির হোসেন।
তিনি বাঙালি জাতিয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষকদের ফোরাম হলুদ দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারক একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান জানান, অধ্যাপক জাকির হোসেন ডিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে প্রত্যাহার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন। আমি আবেদনটি গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগও নেই। কারণ গত ২০ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। ফলে ওনার প্রার্থিতা বহাল থাকবে। ভোটাররা তাঁকে ভোট দিতে পারবে।’
রেজিস্ট্রারকে পাঠানো চিঠিতে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুককে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারী করা হলেও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক উপাচার্য হিসাবে যোগদান না করে আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে তাঁর প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন। কাউকে উপাচার্য নিয়োগের আগে তার কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার মানে তিনি নিয়োগে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। তাই নিয়োগের রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারীর পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিতভাবে না জানানোর আগে পর্যন্ত তিনি এই নিযোগ গ্রহণ করেছেন বলে পরিগণিত হয়। যাই হোক, ২৪ ও ২৮ মার্চ দুইটি পত্রিকায় চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার হিসাবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আপনি পত্রিকা দু’টিকে জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক আপনাকে জানিয়েছেন যে, তিনি রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে যোগদান করবেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য হিসাবে যোগদানের চেয়ে ডিন পদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘ডিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন আনুষদের সহকর্মীদের মধ্যে ভয়ংকর বিভেদ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশনও হুমকির মুখে পড়েছে। অনুষদের সহকর্মীদের সম্পর্কের বুনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকজন সহকর্মী তাঁদের বিব্রতকর অবস্থা ও মনোকষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মাঝে সালাম-শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েও বিভেদ-বিদ্বেষের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনও কোনও কর্তাব্যক্তিও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিভাগের একজন শিক্ষক সহকর্মীদের কাউকে কাউকে ডেকে দফায় দফায় নির্বাচন বিষয়ে অনুচিত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন যার ফলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।’
অধ্যাপক জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সহকর্মীদের মাঝে বিদ্বেষে বিষাক্ত পরিবেশের কারণে অনুষদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি নির্বাচনের কারনে শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব গড়তে দেয়া গর্হিত অপরাধ। যে নির্বাচন সহকর্মীদের একে অপরের শত্রুতে পরিণত করে, আইন শিক্ষার অনন্য উচ্চতার প্রতিষ্ঠানকে কাশিম বাজার কুঠিতে রুপান্তরিত করে, কোনও বিবেকবান মানুষ সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশীজন থাকতে পারেন না। কাজেই এমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমি সমীচিন মনে করি না। আইন অনুষদের বৃহত্তর স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল বিভেদ-বিদ্বেষ-শত্রুতা ও বিব্রতকর অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে ডিন নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহকর্মীদের আমাকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনএ/নবাব,ওজি
