22 C
আবহাওয়া
৮:২০ পূর্বাহ্ণ - জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে ১২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা

কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে ১২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা

ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় পদদলিত

বিশ্ব ডেস্ক: উত্তর ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

ঘটনার পটভূমি
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রয়াগরাজ শহরের নদীর তীরে ঘুমিয়ে থাকা তীর্থযাত্রীদের ওপর দিয়ে স্নানের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা ভক্তদের ঢল চলে যাওয়ায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। নদীগুলোর মিলনস্থলের কাছে ব্যাপক হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মধ্যরাতের পর সাড়ে একটা থেকে দুইটার মধ্যে একদল ভক্ত পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সঙ্গমস্থলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পদদলিত হওয়ার এই ঘটনা ঘটে। কুম্ভ মেলায় গঙ্গা, যমুনা ও কাল্পনিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলকে পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে পুণ্যার্থীরা স্নান করে পাপমোচনের বিশ্বাস রাখেন।

উদ্ধার কার্যক্রম ও হতাহতের পরিস্থিতি
ঘটনাস্থল থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার দিকে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স বের হতে দেখা গেছে। ভোর ৫টার দিকে মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে অন্তত ২০টি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। যদিও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ব্যস্ততা পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট করেছে।

এখনও হাজার হাজার মানুষ উৎসবে যোগ দিতে আসছেন। তবে তাদের চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। বিভিন্ন চেকপয়েন্টে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

The Amrit Snan on Mauni Amavasya is the most significant ritual of the Maha Kumbh.

বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
অনেক তীর্থযাত্রী জানিয়েছেন, তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি, কারণ নির্দেশনা ছিল অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।

ভক্ত সুনীল গোস্বামী ও রামজি কর জানিয়েছেন, তারা প্রায় একদিন ধরে হেঁটেও স্নানস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।

বিভিন্ন চেকপয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে ভক্তদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এমনকি, কিছু স্থানে পুলিশের মধ্যেই মতানৈক্য দেখা গেছে, যেখানে কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যারিকেড পার হতে দিতে তাদের সহকর্মীদের অনুরোধ করছিলেন।

জরুরি পরিষেবার কর্মীদের স্ট্রেচারে মৃতদেহের মতো কিছু বহন করতে দেখা গেছে, যা মৃত্যুর আশঙ্কা আরও জোরালো করেছে।

পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত
যদিও কুম্ভ মেলায় মানুষের ঢল অব্যাহত রয়েছে, তবে বিশৃঙ্খলা, ভক্তদের বিভ্রান্তি ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে উৎসবের পরিবেশ রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়,

মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভ মেলায় পদদলনের ঘটনায় ৩০ জন নারী আহত, আকাড়াদের পবিত্র স্নান স্থগিত

মৌনী অমাবস্যার সকালে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় পদদলনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে অন্তত ৩০ জন নারী আহত হন। এই ঘটনার পর আকাড়ারা তাদের পবিত্র স্নান (অমৃত স্নান) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কোটি কোটি ভক্ত অমৃত স্নানের জন্য তীর্থনগরীতে সমবেত হলে ‘সঙ্গম’ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি ব্যারিকেড ভেঙে যায়। এতে কিছু নারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন, যার ফলে পদদলনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা কয়েকজনকে মহাকুম্ভ মেলা চত্বরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর বেইলি হাসপাতাল এবং স্বরূপ রানি মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।

পবিত্র স্নান স্থগিতের ঘোষণা

অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদের সভাপতি মহন্ত রবীন্দ্র পুরী জানিয়েছেন, মৌনী অমাবস্যার অমৃত স্নান তারা স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, “আপনারা সকালের ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন, এবং এই কারণেই আমরা আমাদের স্নান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সব সাধু ও সন্ন্যাসীরা স্নানের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু এই ঘটনার কথা জানার পর আমরা স্নান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

জুনা আখড়ার পৃষ্ঠপোষক মহন্ত হরি গিরিও ভক্তদের আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন গঙ্গার যেখানেই থাকুক না কেন, স্নান সেরে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যান।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে ত্রাণ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ পদদলনের মতো পরিস্থিতি এড়াতে পন্টুন সেতুগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

দ্বিতীয় অমৃত স্নানের একদিন আগে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে পৌঁছেছিলেন, আর মৌনী অমাবস্যার দিনে সেই সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেখানে এআই-চালিত নজরদারি ক্যামেরা, ড্রোন পর্যবেক্ষণ এবং পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মেলা এলাকা পুরোপুরি গাড়িমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের চার চাকার যান ব্যবহার না করে, প্রয়োজনে কেবল প্রবীণ নাগরিকদের জন্য দুই চাকার বাহন ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রেল ও চিকিৎসা সুবিধা

প্রত্যাশিত বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রীদের জন্য ভারতীয় রেলওয়ে ৩৬০টি ট্রেন পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ১৯০টি বিশেষ ট্রেন। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিইও সত্যীশ কুমার জানিয়েছেন, “উত্তর রেলওয়ে, উত্তর-পূর্ব রেলওয়ে এবং উত্তর-মধ্য রেলওয়ের তিনটি অঞ্চলে এই বিশেষ ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রতি চার মিনিটে একটি ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করবে এবং তীর্থযাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করবে।”

এছাড়া, উত্তর প্রদেশ সরকার মহাকুম্ভ মেলায় ১,০০০-এরও বেশি চিকিৎসা পেশাদার নিয়োগ করেছে এবং মেলা এলাকার প্রতিটি সেক্টরে ছোট থেকে বড় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মহাকুম্ভ নগরের সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালে ৩০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোতায়েন করা হয়েছে।

দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা ও আখড়াদের স্নানের রীতি

এই বছরের মৌনী অমাবস্যার অমৃত স্নান বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি ‘ত্রিবেণী যোগ’ নামক এক বিরল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনার সঙ্গে মিলে গেছে, যা প্রতি ১৪৪ বছরে একবার ঘটে।

কুম্ভ মেলার রীতি অনুসারে, তিনটি প্রধান সম্প্রদায়—সন্ন্যাসী, বৈরাগী ও উদাসীন—এক নির্দিষ্ট ক্রমে শোভাযাত্রার মাধ্যমে সঙ্গম ঘাটে পৌঁছে পবিত্র স্নান সম্পন্ন করে। কিন্তু এবারের অমৃত স্নান স্থগিত হওয়ায় ভক্তদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।


বিএনএ,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ