।। সৈয়দ সাকিব।।
বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান—অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের শাখা। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি ফাস্ট ট্র্যাক জোনও রয়েছে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই। তবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের শাখা বা জোন ক্যাম্পাসে থাকলেও ফি পরিশোধ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি প্রদান করতে হয় শিক্ষার্থীদের। দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থাকলেও কেবল অগ্রণী ব্যাংকেই ফর্ম পূরণ, হল ও বিভাগ সংক্রান্ত ফি পরিশোধ করা যায়। এতে অনেক সময়ই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
বিভিন্ন বর্ষের ভর্তির ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনেই সম্পন্ন হয়; সেক্ষেত্রে ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরীক্ষার ফরম পূরণ, হলের সিগনেচার ফিসহ অন্যান্য খাতে টাকা পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সরাসরি অগ্রণী ব্যাংকে যেয়েই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা পরিশোধের সুযোগ থাকলে কেবল একটি ব্যাংকের উপর চাপ অনেকটাই কমে যেত; দীর্ঘ লাইনটা হয়ত খুব সহজেই দূর হয়ে যেত। এছাড়া, ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলে ভোগান্তিটা একেবারেই কমে যেত বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম আর উন্নত হলো না। আমাদের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার স্যার ৬৫তম ব্যাচের হল সমাপনীতে বক্তব্যের মাঝে বলছেন রাবি নাকি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ আমি গতকাল ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে জিয়া হলে গেলাম সেখান থেকে এসে অগ্রণী ব্যাংকে জ্বর নিয়েই লম্বা লাইনে দাড়িয়ে ২ ঘন্টায় হল ফি দিলাম। তারপর ফরম ফিলাপ করে ডিপার্টমেন্টে যাওয়া সেখান থেকে আবার হল যা ছাত্রদের জন্য দুর্বিসহ। এমন কোন শিক্ষার্থী নাই যে বলতে পারবে তিনি একদিনে সকল কাজ শেষ করতে পেরেছে।”
পলাশ আরও বলেন, হলের কাজ শুনলেই সবাই বলে ২ দিন লাগবে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল হলো কিভাবে? আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিকার চাই। এই সিস্টেম ডিজিটাল করা হলে আমরা ঘরে বসে মোবাইল ফোনেই সব কাজ করতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল আলম তন্ময় বলেন, “রাবিতে যখন ভর্তি হয়েছি তখন অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন ভবনে স্লিপ নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হয়। যা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টদায়ক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অগ্রণী ব্যাংকের পর সোনালী ব্যাংকের একটি নতুন শাখা খোলা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি উদ্বোধন হওয়া সোনালী ব্যাংকের এই শাখাটিতে এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ কিংবা হল সংক্রান্ত ফি প্রদানের সুবিধা দেওয়া হয়নি।
তবে সোনালী ব্যাংক, রাবি শাখার প্রধান মো. জাহেদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। আমাদের সোনালী ই-সেবার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সেই প্রস্তাবনার সাপেক্ষে কোনো ফিডব্যাক এখনও আমরা পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের যেকোনো লেনদেনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”
ব্যাংকে ফি পরিশোধ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “আমরা অলরেডি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বলেছি যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি না হয়। শিক্ষার্থীদের দাড়ানোর জন্য তাদেরকে বাড়তি জায়গাও নিতে বলেছি। এছাড়া বাকি দুটি ব্যাংকের সাথেও কথা বলেছি। আশা করি শিক্ষার্থীরা বাকি দুটি ব্যাংক থেকে খুব দ্রুতই সেবা নিতে পারবে।”
ডিজিটালাইজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে তাদের সেবা নিতে পারবে।”
বিএনএ/এমএফ/এইচমুন্নী