বিএনএ, কক্সবাজার: বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেবে ৪৩ জন সাঁতারু। এর মধ্যে দুজন নারী ও ৪১ জন পুরুষ রয়েছে। দুই নারীর মধ্যে একজন ভারতীয়। ওই নারী সাঁতারুর নাম রচনা শর্মা ও আরেকজন বাংলাদেশি নারী সাঁতারু। তার নাম এম এস টি শোহাগী আক্তার। কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে এ স্রোত ধারার নাম- ‘বাংলা চ্যানেল’।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহ্পরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে এই সাঁতার শুরু করা হয়। এতে উদ্বোধন করেছেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী।
১৬ দশমিক এক কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতে গিয়ে সাঁতার শেষ হবে। এবারের সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’।
এ উপলক্ষে গত সোম, মঙ্গল ও বুধ বিকালে শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকতে সাঁতারুরা দল বেধে অনুশীলন করেছেন। আয়োজনে সহযোগিতার আছেন ভিসাথিং, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, সরকার এগ্রো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এবারের বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। এখন পর্যন্ত ১৯ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এর আগে এই চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহসিক অভিযান তাও এক-দুবার নয়; গুণে গুণে ১৭ বার (২০১২ সালে ২ বার পাড়ি দেন, সেই হিসেবে ১৭) পাড়ি দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সফল হলে টানা ২০ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার একক রেকর্ড গড়বেন তিনি।
এবারের সাঁতারুরা হলেন, ফজলুল কবির সিনা, লিপটন সরকার ২০ বার, মো. মনিরুজ্জামান ১৩ বার, আয়রনম্যান খ্যাত মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত ১০ বার, শেখ মাহবুব উর রহমান, আল্লামা দিদার, সালাহ উদ্দিন, মো. কামাল হোসেন, এমডি জিহাদ হুসেন, আবাদুল ইসলাম, মো. ইলিয়াস হোসেন, মাহাদী হাসান সায়েম, আব্দুল্লাহ আল সাবিত, এস এম শারিয়ার মাহমুদ, হুমায়েদ ইছাহাক মুন, রচনা শর্মা (ভারতীয়), আতিকুল ইসলাম, মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মো. আব্দুল মতিন, জয়তু দাস, মো. মইজ উদ্দিন মেরাজ, ফরিদ আহমেদ খান, আব্দুল ইলা, মোহাম্মদ তামিম পারভেজ, মুরাদ হোসেন, মো. গোলাম হাফিজ, সবুজ কুমার বর্মন, মো. নাদিম মাহমুদ, মো. মাহমুদুল হাসান, হাসান ইমাম, মো. জামিল হোসেন, জাফর সাদাক, শরভ শমাদ্দার, মো. মুশা আহমেদ, মো. নাসির উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান বনি, সাইফুল ইসলাম রাসেল, মো. আবুল্লাহ আল রোমান, সুমন বালা, মো. ফারুক হোসেন, এম এস টি শোহাগী আক্তার, মো. নাজমুজ সাকিব শিমুম ও উজ্জাল চৌধুরী।
আয়রনম্যান খ্যাত মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত বলেন, এবার আমার ১০ বারের মতো সাঁতার। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাঁতার প্রতিযোগিতা। প্রতিবারই সাঁতারে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা।
ভারতীয় সাঁতারু রচনা ভাটিয়া শর্মা জানান, ‘ভারতের TRICLUB GURGAON-এর একজন সাঁতার ও ট্রায়াথলন কোচ। তিনি এই বছর ফিনল্যান্ডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসহ চার বারের আয়রনম্যান। তিনি তার ৫০ তম জন্মদিনে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার কাটতে প্রস্তুত হচ্ছেন। কয়েক বছর আগে যখন থেকে তিনি বাংলা চ্যানেল সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, তখন থেকে তিনি এটি সাঁতার কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু কোভিড এটি ঘটতে বাধা দেয়। তিনি এখানে এসে রোমাঞ্চিত এবং তাদের সমর্থনের জন্য আয়োজক ও শোরোজ অ্যাডভেঞ্চারদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে ভারত থেকে আরও সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করবে।
লিপটন সরকার জানান, এবার ভারতীয় ও বাংলাদেশি দুই নারীসহ ৪৩জন সাঁতারু অংশ নেবেন। এই সাঁতার আন্তর্জাতিক রীতি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে।নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।প্রত্যেক সাঁতারুর জন্য বোট ও উদ্ধারকর্মী রয়েছে। বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক করতে পেরেছি। ধারাবাহিকভাবে এ নৌপথে সাঁতার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবারেই সাঁতারুদের অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয়।
প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার জানান, বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলা চ্যানেল আয়োজন প্রতিবছর করছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, আসলে এই সাঁতার প্রতিযোগিতা প্রশংসার দাবিদার। ইংলিশ চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলা চ্যানেল ও বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করছে। প্রতিবছর কোনো না কোনো বিদেশী এই চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছেন। আগামীতে উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে এই চ্যানেল সাঁতারে।
বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক এক কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির সিনা ও সালমান সাইদ।
বিএনএ/ এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন,ওজি