21 C
আবহাওয়া
৭:০১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ২০২০ সালের আলোচিত হত্যাকাণ্ড

২০২০ সালের আলোচিত হত্যাকাণ্ড

২০২০ সালের অলোচিত হত্যাকাণ্ড

বিএনএ,ডেস্ক: শেষ হচ্ছে ঘটনাবহুল একটি বছর ২০২০ সাল। আর কয়েকদিন পর শুরু হবে ইংরেজি নতুন বছর ২০২১ সাল।  পুরোনোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলার প্রত্যয় নিয়ে নতুন বছরে নতুন আশায় বুক বাঁধবে মানুষ।সময়ের যাত্রায় অতীত হলো আরও একটি বছর।তবুও ২০২০সালে দেশের কোথাও না কোথাও ঘটেছে গেছে ভয়ঙ্কর অনেক ঘটনা। যদিও কোন অঘটনই মানুষের  কাছে প্রত্যাশিত নয়। এর বেশিরভাগ ঘটনায় খোদ রক্ষককই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে! গুজব রটিয়ে, মিথ্যা ট্যাগ দিয়ে জনসম্মুখে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। যা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।এক একটি হত্যাকাণ্ড দেশের বিবেকবান প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে।আলোচনার ঝড় উঠে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অতীতের হত্যাকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে দোষীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বিবেকবান মানুষ।

আলোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় পুলিশ চেকপোস্টে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা, রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মীদের মারধরে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম হত্যা। ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে সিলেটে মেট্রোপলিটনের বন্দরবাজার ফাঁড়ির মধ্যে রায়হান আহমেদ নামের এক যুবককে হত্যা, লালমনিরহাটে মসজিদের ভেতরে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব রটিয়ে জুয়েল নামে এক মুসল্লিকে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা উল্লেখযোগ্য।

কক্সবাজারে মেজর সিনহা হত্যা:চলতি ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর সিনহাকে বহনকারী গাড়ি দাঁড় করানো হয়। তিনি গাড়ি থেকে বের হলে তাকে গুলি করে হত্যা করে  পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলী।জীবন নিরাপত্তার রক্ষক হয়ে উল্টো জীবন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় অসংখ্য প্রশ্নের মুখে পড়ে গোটা পুলিশ বাহিনী।

ত্যাকাণ্ডের সময় সিনহার সঙ্গে কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ করছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। পরে তাদেরকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পুরিশ মাদক আইনে মামলা করে।

এই হত্যার ঘটনায় ৫ আগস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলা দায়ের করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার। এতে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়।পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

গত ১৩ ডিসেম্বর  আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। মামলায় যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে  ১৪ জন গ্রেফতারর আছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

এরপর ২১ ডিসেম্বর এই হত্যার মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। সেইসঙ্গে এই মামলার পলাতক আসামি সাগরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় দায়ের করা ২ টি মামলা থেকে সিনহার সহযোগী সিফাতকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা:গত ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট মেট্রোপলিটনের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী।

এর আগে রায়হান হত্যাকাণ্ডে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপরে সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সৌমেন মিত্র এবং এসআই আব্দুল বাতেন ভুঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের সদর দপ্তরের তদন্ত দলের প্রতিবেদনের পর তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে  বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর দুপুরে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল হত্যা:মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য ৯ নভেম্বর সিনিয়র এএসপি আনিসুলকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে নিয়ে যান স্বজনরা। এরপর সেখান থেকে তাকে আদাবরের মাইন্ড এইড নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধরের শিকার হন তিনি। পরে স্বজনরা এএসপি আনিসুলকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে গেলে  তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায়  গত ১০ নভেম্বর মাইন্ড এইডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আনিসুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ। এ মামলার আসামিদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুরিশ। তাদের মধ্যে হাসপাতালটির অন্যতম পরিচালক ডা. নিয়াজ মোর্শেদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি ১১ জনকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জন দায় হত্যার স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আনিসুল হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাতীয় মানসিক ইন্সটিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনকেও গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাকেও এ মামলায় অভিযুক্ত দেখানো হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনিসুলকে মারধরের ঘটনা মাইন্ড এইড হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে ধরা পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ফুটেজ ভাইরাল হয়। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে এ হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।জিজ্ঞাসাবাদেও তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে অভিযুক্তরা। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হতে পারে। এ ঘটনায় চার্জশিটে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা জানায়– আনিসুলকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাইন্ড এইডের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে জোর করে তাকে ঢুকানো হয়। রুমে নিয়ে তাকে উপুড় করে শুইয়ে দুই হাত পিঠ মোড়া করে বাঁধা হয়। এ সময় ঘাড়, মাথা, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। আনিসুলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

তদন্ত সূত্র আরও  জানায়, আনিসুল হত্যা মামলার চার্জশিটে মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ, মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, কিচেন শেফ মাসুদ, ফাতেমা খাতুন ময়না এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন, সাজ্জাদ আমিন ও সাখাওয়াত পলাতক রয়েছেন। ডা. নিয়াজ মুর্শেদ পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন। অন্যরা কারাগারে আছেন।

কোরআন শরীফ’অবমাননার গুজব রটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা:কোরআন শরীফ ‘অবমাননার’ গুজব ছড়িয়ে গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৪৫) নামের এক মুসল্লিকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর পুড়িয়ে দেয়া হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দরের একটি মসজিদে ঘটনার সূত্রপাত।

এ ঘটনায় দায়ের করা ৩টি মামলায় এজাহার নামীয় ১১৪  এবং অজ্ঞাত কয়েকশ অভিযুত্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জুয়েলকে প্রথম মারধরকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলী, দুই নম্বর অভিযুক্ত খাদেম জোবায়েদ আলী ওরফে জুবেদ আলী এবং মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ওই মসজিদে আছরের নামাজের পর জুয়েল নামের ব্যক্তি ধর্মের অবমাননা করেছেন-এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার রক্তাক্ত মরদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশ-বিদেশে। এমন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে সব মহল থেকে।পুড়িয়ে হত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন।

আসন্ন নতুন বছর ২০২১ সালে সবার প্রত্যাশা, ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ সালটি যেন সবার ভাল কাটে।রাষ্ট্রের কাছে  জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যথাযথ ব্যবস্থা চায় প্রতিটি নাগরিক।নতুন বছর ২০২১ সালে শান্তি আর মঙ্গলে ভরে উঠুক পুরো দেশ।

বিএনএনিউজ/আরকেসি,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ