33 C
আবহাওয়া
৭:২৪ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেমন হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খ্রিষ্টান ‘ক্রাউন স্টেট’?

কেমন হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খ্রিষ্টান ‘ক্রাউন স্টেট’?


ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের পার্বত্য এলাকা ও পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকা নিয়ে একটি ‘ক্রাউন স্টেট’ গঠনের কথা ভাবছিল, যা সরাসরি ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হবে। এই পরিকল্পনা প্রায় বাস্তবায়িত হতে হতে ভণ্ডুল হয়ে যায়।

কিন্তু এত বছর পর এসে এ পরিকল্পনা গোপনে পুনরুজ্জীবিত করা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই অঞ্চলে যদি একটি খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাফার স্টেট গঠন করা যায়, তবে ভারত ও চীনের মতো সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরাশক্তিগুলোর বাধা পেরিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকা ও ইইউ আরো সহজে প্রবেশাধিকার পাবে এবং পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওপর আরো শক্ত নজরদারি করতে পারবে।

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুর ও তার আশেপাশের রাজ্যে সংঘাতের বিস্তৃতিতে সেই আলোচনা নতুন গতি পেয়েছে। কথিত এই খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের সাথে ভারতের সেভেন সিস্টারস, মিয়ানমারের চিন প্রদেশ এবং বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার পর্যন্ত এর সীমানা বিস্তৃত থাকার গুঞ্জন রয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রাজি হননি বলে উল্লেখ করে গত ২৩ শে মে ১৪ দলীয় জোটের এক মতবিনিময় সভায় হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পর দেশ-বিদেশে কথিত খ্রিষ্টান রাষ্ট্র নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। যদিও খ্রিস্টান রাষ্ট্রের প্রস্তাবকারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে।গত ২৩শে সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১২০ দিন আগের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছে।

সংগঠনটির আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছে, পার্বত্য অঞ্চলকে আমাদের ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বহু পুরনো। বিভিন্ন খ্রিস্টান মিশনারী এই উদ্দেশ্যে সেখানে এখনো সক্রিয়। এছাড়া পশ্চিমা ফান্ডের লোভে দেশের কিছু এনজিও এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ‘আদিবাসী’ প্রচারণায় তৎপর রয়েছে।এদেশের সেনা-জনতা বাংলাদেশবিরোধী এ ধরনের ষড়যন্ত্র কখনো বাস্তবায়িত হতে দেবে না।

প্রশ্ন উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে কেন মার্কিন পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানাতে চায়?
অনুসন্ধানে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন ১৩ হাজার ১৪৮ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের এক-দশমাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থান দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলনস্থলে এবং ভারত মহাসাগরের প্রবেশপথে, বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। এ অঞ্চলের সীমান্তসংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম ও মিয়ানমারের আরাকান, শান, কাচিন ও চিন প্রভৃতি প্রদেশ অবস্থিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘবদ্ধ আকৃতি, প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘ্যে কয়েক গুণ বেশি হওয়া, কম বসতি হওয়া এবং ভরপুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পাশাপাশি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে ভূ- কুটনৈতিক রাজনীতি।

বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও আশপাশের অঞ্চলে প্রভাববলয় সৃষ্টির জন্য ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীই পার্বত্য চট্টগ্রামের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে আসছে।

তথ্য অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ২ শত ৫০ কোটি মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। অথচ পুরো এশিয়াজুড়ে খ্রিষ্টানদের পূর্ব তিমুর ছাড়া অন্য কোন দেশ নেই। ৯৭ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানের এই দেশটিকে ২০ বছর আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে জাতিসংঘ স্বাধীন করে দেয়। এই পূর্ব তিমুর ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশও নেই। জনসংখ্যা বিবেচনায়, প্রায় দুই লাখ বর্গকিলোমিটারের এই বিশাল বলয়ে মাত্র চারটি রাজ্যে যেমন কেরালায় ১৮ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ৮৮ শতাংশ, মিজোরামে ৮৭ শতাংশ এবং মেঘালয়ে ৭৫ শতাংশ খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী। মিয়ানমারের চিন এস্টেট এদের কাছেরই জনপদ, যেখানে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ৯৬ শতাংশ।
বাংলাদেশের ২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে, তিন পার্বত্য জেলায় খ্রিষ্টান ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে এককভাবে বান্দরবানে খ্রিষ্টান ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা এখনো তেমন বেশি না হলেও এই অঞ্চলে কয়েক শ’ এনজিও ও খ্রিষ্টান মিশনারি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিষ্টানকরণের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের ৩০ শতাংশ, মারমাদের ৫০ শতাংশ এবং ত্রিপুরাদের ৭০ শতাংশ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। পাঙ্খো, লুসাই, মুরং, চাকের মতো কিছু কিছু ক্ষুদ্র উপজাতি গোষ্ঠীর প্রায় ১০০ শতাংশ সদস্য খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত।

খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের বিষয়টি একটি ভূরাজনৈতিক কৌশলগত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। যেখানে ভারত, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ সরাসরি জড়িত। বৃহৎ বৌদ্ধ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র চীনেরও বিষয়টির ওপর সর্তক দৃষ্টি রয়েছে।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। যেখানে সবচেয়ে সক্রিয় দক্ষিণ-পূর্বের কারেন, উত্তরের কাচিন এবং পশ্চিমের চিন অঞ্চলে সুসংগঠিত গেরিলা যোদ্ধাদের মধ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম বিশ্বাসের মানুষও অনেক। যদি দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গণতন্ত্রপন্থীদের সশস্ত্র সংগ্রাম বিজয়ী হয় তাহলে প্রান্তিক এলাকা বাড়তি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। এই স্বায়ত্তশাসন থেকেই একসময় স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে। আবার গণতন্ত্রপন্থীদের সংগ্রাম অনিশ্চিতভাবে দীর্ঘায়িত হলেও গেরিলারা এ তিন অঞ্চলকে খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই অবস্থায় বিশ্বের বৃহৎ খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী এবং পশ্চিমা পরাশক্তির সমর্থন এবং সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ