বিএনএ, জামালপুর: গ্রামীন অর্থনীতি ও দেশের বেকার যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় সরকার জামালপুরে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আধুনিক ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প। এ প্রকল্প জেলার ৭টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা ভাব ফিরে এসেছে।
বাড়ির উঠানে পানির ট্যাংক। ট্যাংকের কাছে এগিয়ে গেলেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, অল্প ঘনত্বে অধিক মাছ উৎপাদন করা। পুকুরে যেখানে প্রতি শতাংশে ৪০০ থেকে ৫০০টি মাছ চাষ করা যায়, সেখানে এ পদ্ধতিতে প্রতি কিউবিক মিটারে ১ হাজার ২০০ মাছ চাষ করা সম্ভব।
জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা হলেও মাছ উৎপাদনে বেশ এগিয়ে রয়েছে। মৎস্য বিভাগ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় বেকার যুবকদের ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদনে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় নান্দিনা, নরুন্দি, পিয়ারপুর, ঘোড়াধাপ, গোপালপুর সহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকার বেকার যুবকরা মাটি কেটে ইট দিয়ে ট্যাংক বানিয়ে তেলাপিয়া সহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছে।
সরেজমিনে বেশ কয়েকটি মৎস্য চাষীর সাথে কথা হয় এর মধ্যে গোপালপুর এলাকার রাসেল (৩০) নরুন্দি এলাকার সেলিম (২৮) এ প্রতিবেদককে জানান ট্যাংক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প মৎস্য বিভাগ মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় সর্বত্রই ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। মহাদান, ভাটারা, কামরাবাদ, মেষ্টা, বালিজুড়ি, পাথরশী,ডাংধরা, পাররামপুর এলাকা ঘুরে দেখা ও জানা গেছে এ সব এলাকার প্রায় তিন শতাধিক বেকার যুবক ট্যাংক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া সহ নানা জাতের মাছ চাষ করে স্বাবলম্বি হয়েছে।
ভাটারা গ্রামের আসাদ(৪০) মেষ্টা এলাকার সাদেক(৩৫) জানান, ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রতিমাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে। এ সব উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন বেকার জনগোষ্ঠীকে আত্ম কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে।
মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডঃ মো. খলিলুর রহমান জানান, মূলত বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অল্প জায়গায় অনেক পরিমান মাছ চাষ করা হয়। এতে পানির মধ্যে বিশেষ কায়দায় ব্যাকটেরিয়া তৈরি করা হয় এবং সেটাই মাছের খাবারকে রিসাইকেল করে – আবার এটা পানি পরিশোধন করতেও সক্ষম। তবে মনে রাখতে হবে পানিতে নাইট্রোজেন আর কার্বনের ব্যালেন্স ঠিকমতো না হলে এটা কাজ করবে না এবং মাছ মারা যাবে। অর্থাৎ পদ্ধতিটির সঠিক প্রয়োগ না হলে মাছের রোগ হবে বা মাছ মারা যাবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে অধিকাংশ বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির চাঁকা জোরালো গতিতে ঘুরছে।
বিএনএনিউজ/কাজী রফিকুল হাসান/রেহানা/ হাসনা