বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা -১৬ আসনের হালচাল।
ঢাকা- ১৬ আসন
ঢাকা-১৬ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত । রাজধানী ঢাকার উত্তরের সীমান্তবর্তী মিরপুরের এই আসনটি পল্লবী ও রূপনগর নামে পরিচিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৮৯ তম আসন।
২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন থেকে ঢাকা-১৬ সংসদীয় আসনটি সৃষ্টি করে।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৪ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩২ হাজার ৬ শত ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: রফিকুল ইসলাম মিয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৩ ভোট।
দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ৬২ হাজার ৮ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৮ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সর্দার মোহাম্মদ মান্নান। আনারস প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ১ শত ৩৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬ শত ৫৮ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো: ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ হাসান, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নাইমা খালেদ মনিকা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের ছিদ্দিকুর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আলী আহামেদ, এবং আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এন পি পি র ফরিদ উদ্দীন শেখ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫ শত ৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ হাসান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫০ হাজার ৫ শত ৩৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।
ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাহ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাহ্র বড় ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ্ও মনোনয়ন চাইবেন, যিনি ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই মোল্লাহ্র শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম মান্নান ওরফে কচি। তিনি তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক। এস এম মান্নান ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস মোল্লাহ্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ২৫ হাজার ১৩৩ ভোট পান। ইয়িলাস মোল্লাহ্ পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ৮৫৫ ভোট।
আর ও মনোনয়ন চাইবেন মহিলা আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহিদা তারেখ দিপ্তী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেনও মনোনয়ন চাইবেন।
প্রসঙ্গত, আমিনুল হক ২০১৪ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দ্রুত দলে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর খেলাধুলা, বেড়ে ওঠা এই এলাকায়। আর মোয়াজ্জেম হোসেন দলের পুরোনো কর্মী। তিনি এলাকায় সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে জিয়াউর রহমানে নামে দুটি হাইস্কুল ও কলেজ করেছেন। যদিও তাঁর করা দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে দিয়েছেন সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ্।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা-১৬ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারবার আওয়ামী লীগ, দুবার বিএনপি জিতেছিল। মিরপুরের শেষ প্রান্তের এই আসনটিতে বড় সমস্যা ‘মাদক’। এরপর আছে পয়োনালার অভাব, খানাখন্দ ও রাস্তাঘাটের দুর্ভোগ। আছে তৈরি পোশাকের কারখানা ঘিরে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই অনেক এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এর মধ্যে পল্লবীর বি ব্লক, কালশী, বাউনিয়া বাঁধ এলাকা উল্লেখযোগ্য।
এই আসনটিতে ‘মোল্লাহ্’ পরিবারের একটা দৃশ্যমান প্রভাব আছে। কারণ, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে ছয়টি জয়ের তিনটিতেই আছেন মোল্লাহ্রা। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে (অবিভক্ত) বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তাঁরই মেজ ছেলে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্।
আগামী নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব আছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশির ভাগই বর্তমান সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ্র বিপক্ষে। আবার নির্বাচন ঘিরে মোল্লাহ্ পরিবার ও গোষ্ঠীতেও বিভক্তি আছে।
ঢাকা ১৬ আসনে ১৫ বছর ধরে বর্তমান সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। বিএনপির সম্ভাব্য কোনো প্রার্থীরও দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। কিন্তু বিএনএ টিমের গবেষণায় দেখা গেছে, আড়ালে বিএনপিও শক্তিশালী। এছাড়া এই আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপিতে তেমন বিরোধ নেই। এই আসনটিতে বিহারিদের বড় একটি অংশের বসবাস রয়েছে। বিহারিদের এই ভোট ব্যাংক বিএনপির বাক্সে যাবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮৯তম (ঢাকা-১৬) আসনে প্রার্থী যিনিই হোন, আওয়ামী লীগের জন্য জেতা এত সহজ হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৮ (ঢাকা-১৫)
বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ