বিএনএ,ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-১৫ আসনের হালচাল।
ঢাকা-১৫ আসন
ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসনটি মীরপুর, কাফরুল, ভাসানটেক আসন নামে পরিচিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৮৮ তম আসন।
২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার পর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য, সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে ঢাকা ১৫ আসনটি সৃষ্টি করে।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪ শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৪ হাজার ২ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হামিদুল্লাহ খান (বীর প্রতীক)। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৬ শত ৪০ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩৪ হাজার ৭ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এখলাস উদ্দীন মোল্লা। হাতী প্রতীকে তিনি পান ৩ হাজার ৩ শত ৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ৮০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২২ হাজার ২ শত ৭৭ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা: মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সামসুল হক, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের হেমায়েত উল্লাহ, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফএর এস.এম ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আবদুল মান্নান মিয়া, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির আহাম্মেদ সাজেদুল হক, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের এইচ এম গোলাম রেজা, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক দল পিডিপির সামছুল আলম চৌধুরী, কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পাটিৃর সাইফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ১ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ডা: মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৯ হাজার ৭১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।
ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। কামাল আহমেদ মজুমদার আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান। এছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও এই আসনের দাবিদার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক নিবন্ধনহীন জামায়াত ইসলামীর সভাপতি ডা. শফিকুর রহমান এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা-১৫ আসনটি আওয়ামী লীগের দূর্গ। এই আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। বিশেষ করে মনিপুর স্কুল ও কলেজের মাধ্যেম তিনি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন। ৫টি ক্যাম্পাসে ১০ শিফটে ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছেন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতি মন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের মনিপুর স্কুল ও কলেজ একটি মডেল। এলাকায় ভোটারদের কাছে তার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়া দলে বড় ধরনের গ্রুপিং-বিরোধ নেই। এই আসনের ভোটারের বড় একটি অংশ বৃহত্তর নোয়াখালীর। কামাল আহমেদ মজুমদারের আদি নিবাস ফেনী জেলার পশুরামে। আঞ্চলিক ভোটের বড় অংশটি সব সময় কামাল আহমেদ মজমুদারের বাক্সে যায়। সব মিলিয়ে নির্ভার আছে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার।
অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি মজবুত না হলেও একেবারে নড়েবড়ে নয়। বিএনপির প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে। যদিও দলটির রয়েছে জনপ্রিয় নেতা সংকট। তবে জামায়াত ইসলামীর ভোট ব্যাংক রয়েছে। জামায়াত ইসলামীর এই ভোট ব্যাংক বিএনপির শেষ ভরসা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮৮তম (ঢাকা-১৫) আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনএ/শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ
আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৭ (ঢাকা-১৪)
