বিএনএ,ডেস্ক: গত ১৯ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির মূখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে এভাবেই সমালোচনা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঈদগাঁ, চকরিয়ায় এনসিপির পথসভা পন্ড করে দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের পহারায় এনসিপি নেতারা বান্দরবানে চলে যেতে বাধ্য হয়।
এই ঘটনার জের না কাটতেই, ২৭ জুলাই নেত্রকোণায় এক সভায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাবেক স্বরাস্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কড়া সমালোচনা করেন।
১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ‘যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন? এই ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এনসিপির’ এই মূখ্য সংগঠক বর্তমানে ভারতে মুসলামানদের ওপর যে নির্যাতন এবং বাংলাদেশে পুশ ইন হচ্ছে, তার জন্য জুলাই আন্দোলন পরবর্তীতে কারামুক্ত সাবেক স্বরাস্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দায়ী করেন।
নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী শুধু বাবরের সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হয়নি- অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা, বাঙ্গালী মুসমানদের ওপর ভারতের নির্যাতন আর্ন্তজাতিক ফোরামে না উঠানোর জন্য —ড. ইউনূসকে কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গত ১৯ জুলাই এনসিপির মূখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের সমালোচনা করে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়লেও; নেত্রকোনায় কোন প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয় বিএনপি একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ওই সমাবেশ থেকে এনসিপির মূখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে গ্রেপ্তারের দাবি করা হয়েছে। তার আগেই নেত্রকোনা থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপদে শেরপুরের পৌঁছে যান।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার ২০০১-২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় যেসব ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন এবং সরকারের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি তৈরি করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ১০ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আটক করা হয় ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল রাতে। দুটি বড় ট্রলারে করে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের এসব অস্ত্র সমুদ্রপথে আনা হয় চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার জেটিতে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকই মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের সেই ঘটনা ভারতের সাথে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মধ্যে শীতল সম্পর্কের সূচনা করেছিল। দেশটির তৎকালীন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে ভারতের চাপে পড়েই বিএনপি সরকার সেসব অস্ত্র আটক করে। অন্যথায় সেসব অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে চলে যেত। অস্ত্রের বিশাল একটি চালান আটকের ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে চট্টগ্রামের একটি আদালত ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়। দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে আটক থাকার পর চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি বেশ কিছুদিন নেত্রকোনায় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখন জাতীয় কিংবা স্থানীয় রাজনীতি থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন।
দীর্ঘ ২০ বছর পর ২৭ জুলাই দুপুরে নেত্রকোনায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির মূখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ২০০৪ সালে পহেলা এপ্রিল বিএনপির শাসন আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের বিষয়টি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের স্মরনে এলো, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কালজয়ী সেই উক্তি ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’!
সৈয়দ সাকিব