27 C
আবহাওয়া
৫:২৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কোটা আন্দোলন: চমেক হাসপাতালে কাতরাচ্ছে আহতরা

কোটা আন্দোলন: চমেক হাসপাতালে কাতরাচ্ছে আহতরা


বিএনএ, চট্টগ্রাম: সারা দেশের ন্যায় কোটা আন্দোলন নিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠেছিল চট্টগ্রাম। যার ছায়া দেখা যায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। আগুনে পুলিশ বক্সের ভেতরে চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র সবই পুড়ে কয়লা। ব্যবহার অনুপযোগী। ভেঙে চুরমার পুলিশের গাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পুলিশ ছাত্রলীগের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। নগরীর রণক্ষেত্রে এসব ঘটনায় আহত হয় অন্তত ৫০০ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ চিকিৎসা নিয়েছেন চমেক হাসপাতালে। এর মধ্যে গুরুতর আহতরা কাতরাচ্ছে চমেকের বিভিন্ন বেডে।দেখা যাচ্ছে কারও পায়ে গুলি, কারও পেটে গুলি। কারও ভেঙে গেছে হাড়, কেউ দেখছে না চোখে।

মো. আকাশ (১৮)। চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ শিখছিলেন। গত ১৬ জুলাই মুরাদপুর মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার পেটের ডান পাশে গুলি লেগেছে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যে তার শরীরে দুই বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আকাশের বাবা গ্যারেজ মিস্ত্রি মো. এনাম। তার বাড়ি নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ সঙ্গীত এলাকায়।

৩নং বেডে চিকিৎসাধীন ১৪ বছরের সুজনের বাঁ পায়ে গুলি লেগেছে। সঙ্গে রয়েছে তার মা নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, সুজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি মেসে কাজ করে। ১৮ জুলাই বাসায় ফেরার পথে বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সুজন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর আমরা জানতে পারি।

ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের ১৩নং বেডে চিকিৎসাধীন নগরীর শুলকবহর দারুত তারবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান বলেন, ১৯ জুলাই মাগরিবের নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়ে আন্দোলনের মুখে পড়ে যাই। সংঘর্ষ শুরু হলে এলাকায় একটি গ্যারেজে আশ্রয় নেই। সেখানেও পুলিশ চলে আসায় পালানোর সময় তারা গুলি করে। আমি আন্দোলনে যোগ দেইনি। তাছাড়া আমি বড় জুব্বা গায়ে দিয়েছিলাম। আমাকে কেন গুলি করা হলো, আমি চিন্তা করে এখনো উত্তর পাইনি।

চমেক হাসপাতালের অর্থোসার্জারি ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৪০ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন গুলিবিদ্ধ আবুল বাসার। কথা বলতে পারছিলেন না, তার যন্ত্রণার কষ্ট যেন বের হয়ে আসছে চোখের পানি হয়ে। পাশে থাকা স্ত্রী খুকি বেগমের কোলে রয়েছে এক বছরের ছেলে রিফাত। স্বামীর যন্ত্রণায় কাঁদছিলেন স্ত্রীও।

চট্টগ্রামে গত ১৬ জুলাই নগরী মুরাদপুর এবং ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, বিজিবি, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ৭জন নিহত এবং আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক। এর মধ্যে ৪০ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। চট্টগ্রামে মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে পাঁচ জনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানায় পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন খান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, যার চারজন ছিলেন গুলিবিদ্ধ। পরে গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে চমেক হাসপাতালে দুই শতাধিক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ১০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসাধীন সবার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি একেবারেই অহিংস ছিল। পরে একটি গোষ্ঠীর তৎপরতায় আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। আমাদের ৬৪ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। অপরাধীদের আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিএনএনিউজ/নাবিদ,ওজি/হাসনা


শিরোনাম বিএনএ