বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৬
১৯ জুলাই, ১৯৭১
কবি শহীদ সাবের আজ আর নেই। কিন্তু তার কবিতা আছে। সেই কবিতাটিই পড়ছিলাম। গত মহাযুদ্ধের সময় ফ্যাসিস্ট জার্মান বাহিনী যেভাবে গেরিলাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল সেসব কথা মনে পড়েছিল শহীদ সাবেরের। সাবেরের মনে তৈরি হচ্ছিল বিদ্যুতের- জন্ম হচ্ছিল একটি কবিতার- আর সেই কবিতা মুহূর্তে মনকে আক্রান্ত করে।
কবিতাটি পড়ছিলাম। শহীদ সাবের আজ আর নেই। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার বর্বর সেনাবাহিনী হত্যা করেছে শহীদ সাবেরকে। হত্যা বলবো, না অন্য কিছু? শহীদ সাবের থাকতেন ঢাকার দৈনিক পত্রিকা ‘সংবাদ’-এর কার্যালয়ে আগুনে-বোমা ফেলে পুড়িয়ে দেয়া হলো সংবাদ কার্যালয়। তাঁরই সঙ্গে পুড়ে গেলেন শহীদ সাবের- যে শহীদ সাবের ছিলেন ফ্যাসি-বিরোধী, ছিলেন মুক্ত মানবতার প্রতীক। ইয়াহিয়ার খুনী সেনাবাহিনী শুধু অধ্যাপক হত্যাই করেনি, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী কেউ বাদ যায়নি।
শহীদ সাবের নেই- কিন্তু আছে তাঁর কবিতা। কবিতাটির একটি ভূমিকা লিখেছিলেন সরদার ফজলুল করিম। লিখেছিলেন: “কিশোর শহীদ সাবের আমারই ন্যায় জেল থেকে জেলান্তরিত হতে হতে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে এসে আমার সঙ্গে দৈবক্রমে মিলিত হয়েছিলেন। রাজশাহীর সাঁওতাল কৃষকদের আত্মপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন পূর্ব-বাংলার আন্দোলনের মধ্যমণি ছিল। আর সে আন্দোলনের সঙ্গে ইলা মিত্রের নামও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।”
সরদার ফজলুল করিম আরও লিখেছেন: “ইলা মিত্রের গ্রেফতার এবং তার উপর অনুষ্ঠিত নির্যাতন তখনকার সংগ্রামের উপকথায় পরিণত হয়েছিল। সে কাহিনীর ভিত্তিতে শহীদ সাবের তাঁর ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’ কবিতাটি রচনা করেন।” সংক্ষেপে এই হল শহীদ সাবেরের সেই বিখ্যাত কবিতার পটভূমি। তাঁর মনে পড়েছিল হিটলারের ফ্যাসিস্ট বাহিনীর অত্যাচারের কথা। কিন্তু যে কারণে আমি বিস্ময় বোধ করি, তা হল শহীদ সাবেরের সেই কবিতায় ইয়াহিয়ার খুনী জল্লাদ সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন সবই প্রতিফলিত হয়েছে বিস্ময়কর ভাষায়। কবিরা নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পান। দেখতে পেয়েছিলেন শহীদ সাবেরও। সবচেয়ে বড় কথা সেই ফ্যাসিস্ট নির্যাতনের শিকার হলেন কবি নিজেই। এমন করে নিজের ভবিষ্যৎ আর কোন কবি দেখেছেন কি? আছে কি কোন উদাহরণ? না নেই- শুধু আছে এই বাংলাদেশে। শহীদের সেই কবিতার তাই কান্নায় সিক্ত, ঘৃণায় ঘৃণায় উচ্চকিত, ছন্দে ছন্দে উচ্ছ্বসিত, পাশব শক্তির ঘৃণ্যতম অত্যাচারের কথা এমন করে কেউ কখনও প্রকাশ করেনি।…..
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৯৫) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬০
গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী