বিএনএ, ঢাকা : মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ মাসের শিশু সন্তান সুবহানা ও স্ত্রী তামান্না আক্তার জান্নাতকে হারিয়ে সুজন আহমেদ এখন দিশেহারা। হাসপাতালের ফ্লোরে গড়াগড়ি করে কেদেঁ কেদেঁ চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে। বিস্ফোরণে ঘটনায় তার ৯ মাসের শিশু সুবহানা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। স্ত্রী জান্নাতকে (২৩) গুরুতরঅবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফ্লোরে দিশেহারা সুজনের কান্না যেন থামানো শক্তি নেই কারও।
কান্না জড়িত কণ্ঠে সুজন বলছিলেন আমার সব শেষ হয়ে গেল, কি নিয়ে আমি আর বাঁচব বলতে পারেন? আমার বাঁচার মতো তো কিছু রইল না। আমার ছোট শিশুর কী দোষ ছিল? কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার সোনা মনি আমার সঙ্গে খেলা করেছে। সবে মাত্র কথা শিখতে শুরু করছে। আমাকে বা-ব্বা, বা-ব্বা বলে ডাকতে শিখেছে। আর কখনও আমাকে বাবা বলে ডাকবে না।
সুজন জানান, আমি রমনা ফার্মেসিতে চাকরি করি। আমার ছোট শ্যালক রাব্বি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। সন্ধ্যায় মগবাজার শরমা হাউজে গিয়েছে তারা। স্ত্রী জান্নাতের আত্মীয়রা সেখানে চাকরি করে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে যায় । হঠাৎ বিস্ফোরণে আমার জীবনের সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে। আমার সন্তান ও স্ত্রী মারা গেছে। শ্যালক রাব্বি কোথায় আছে তাও জানি না। কী আর রইল আমার বেঁচে থাকার সম্বল?
প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রফিকুল ইসলাম জানান, সুজন পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকে। ৪৮৭ নম্বর বড় মগবাজারের নিচতলায় স্ত্রী ও ৯ মাসের শিশু সন্তান সুবহানাকে নিয়ে ভাড়া থাকে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তান এভাবে চলে যাবে, এই ভয়াবহ দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না।
রোববার সন্ধ্যায় মগবাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার সকাল পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢামেক হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ৪জন মারা গেছেন। তাদের একজন জান্নাত ও স্বপন এবং ২ জন অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ। ঢামেক হাসপাতাল ও বার্ণে ১৪জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
দগ্ধদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন – রাসেল (২৪), জাকির হোসেন (৪০), নয়ন (৩২), মোতালেব (৪০), আবুল কালাম (৩৫), মো. পইমল হোসেন (৪০) মোস্তাফিজ (৪৫), নবী (২৮),আজাদ (৩৫) ও ইমরান(৩৫)। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা.পার্থ শংকর পাল জানান, মগবাজারের দুর্ঘটনায় ১৭ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। এর মধ্যে দুজনকে আইসিইউতে, একজনকে এসডিইউতে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই চিকিৎসা পর চলে গেছেন।
দগ্ধ তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের ৫০থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। অন্য আহতরা যারা আছেন, তারা মোটামুটি ভাল আছেন।
বিএনএ/আজিজুল, ওজি