বিএনএ ডেস্ক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেছেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছি।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এ দাবি করেন।
গত বছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটে অংশ নেয় দলটি। মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। দলের তৃণমূলের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তা বর্ধিত সভায় জানিয়েছেন জিএম কাদের। এ সময় তিনি নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও ব্যাখ্যা করেন।
আন্দোলন করতে নেমে বিএনপি কিছু ভুল করেছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের বাহিরে রাখতে সরকার কৌশল নেয়। সেটি বুঝতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে সমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিএনপি কিছু ভুল করে ফেলল। তারা ফাঁদে পড়ে গেল। তারা বলে, আমি না গেলে নাকি নির্বাচন হতো না। বিএনপি-জামায়াতের নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ওপরে দোষ দেয়।
জাতীয় পার্টি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও চাপের মুখে তা পালটাতে বাধ্য হয়। কোন্দল করে দল ভেঙে দেওয়া হবে-এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ২৬ জনের তালিকা দেওয়া হলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিল সেখানে স্বতন্ত্র পাওয়ারফুল প্রার্থীও রেখে দিল। শুধু কয়েকটি আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার যাকে পাশ করাতে চায়, তাকে পাশ করানো হয়েছে। আমাকে হারানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে।
নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে প্রার্থী করা নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেন জিএম কাদের। ১০টি আসনের চেয়ে উত্তরার এই আসন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই দলের শক্তিশালী অবস্থানের জন্য আমার স্ত্রীকে প্রার্থী দিয়েছিলাম বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগ প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র কায়েম করছে বলেও মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায় না, এটা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণ। এসব করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা সব এককেন্দ্রিক। এভাবে চললে দেশে কোনো দলই টিকবে না। এখন এমন অবস্থা করা হয়েছে যে, রাজনীতি করলে হয় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাসের মাথায় এসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী