বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদসহ চার দফা দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা এই অবরোধ শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। অপরদিকে, অনেকদিন পর আজ স্কুল খোলায় বিপাকে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় বাস, টেম্পুসহ বিভিন্ন গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাগামী রুটেও বাস চলাচল বন্ধ আছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু যানবাহন চলাচল করলেও বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের।
নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা সাফরিন হোসেন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সীকে (বিএনএ) বলেন, ধর্মঘটে কোন টেম্পু পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গিয়েছে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে আসতে হয়েছে। ধর্মঘটের দোহাই দিয়ে বাড়তি ভাড়ার সুযোগ নিচ্ছে টেম্পু ও বাসচালকরা। যদিও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে স্ক্রলবারে ব্রেকিং নিউজে পরিবহন ধর্মঘটের প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। কর্মস্থলে পৌছাতে দেরি হওয়ায় কাজেরও ব্যাঘাত ঘটেছে।
এর আগে, শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা মালিক সমিতি কার্যালয়ে গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের জরুরি সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। এ সময় গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এই ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করেছে মালিক-শ্রমিকদের একাংশ।
মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, গত সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনার পর ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু এর ভেতরেই তিনটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই রুটের বাস চালক, মালিক ও শ্রমিকদের অব্যাহতভাবে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে রাস্তায় ছোট ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ ও হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এসময় তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ১২০টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা জানিয়েছেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলায় বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও অটোটেম্পু চলাচল বন্ধ থাকবে। দূরপাল্লার কোনো বাস এসব জেলা ও মহানগর থেকে ছাড়বে না এবং ঢুকতেও পারবে না। মালিক-শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।
এদিকে, ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম পিকআপ, সিএনজি, টেম্পো ও পণ্য পরিবহন মালিক চালক ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ অটোরিকশা হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাত ৮টায় নগরীর কর্ণেলহাট স্কুল মার্কেটে সংগঠনের কার্যালয়ে এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ডাক দেয় সংগঠনটি।
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে চট্টগ্রাম পিকআপ, সিএনজি, টেম্পো ও পণ্য পরিবহন মালিক চালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ অলি হাওলাদার বলেন, ধর্মঘট সড়কখাতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থ পরিপন্থী এবং বেআইনি। কথিত পণ্য পরিবহন পরিষদের ব্যানারে চার দফা দাবিতে যারা বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বেআইনি ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করছি। রোববার পরিবহন শ্রমিকরা কোনো প্রকার বাঁধা ছাড়া সড়কে গাড়ি চালাবে। কোনো দুষ্কৃতকারী বাঁধা দিলে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।
বিএনএনিউজ/ বাবর মুনাফ/ রেহানা ইয়াছমিন