বিএনএ, রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘায় শিশু সন্তান লিজাকে তার বাবা বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অপরাধ মেয়ে হওয়া। সেই লিজার চাকরি হলো পুলিশে। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই মেয়েটি বাবার শাস্তি নয়, বাবা যেন তাকে নিয়ে গর্ব করে এমন প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছে।
জানা যায়, রাজশাহী বাঘা উপজেলা নারায়নপুর গ্রামের বুলবুলি বেগমের ১৬/১৭ বছরেই বিয়ে হয় একই উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের দিনমজুর রিফাজের সাথে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় বুলবুল বেগমের কোল আলো করে পৃথিবীতে আসে তাদের কন্যা সন্তান লিজা। আর এতেই সংসার বলতে যেটুকু ছিল তাও লন্ডভন্ড হয়ে যায়। প্রথম সন্তান কন্যা হওয়ায় কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি তার পিতা। লিজার বয়স যখন ৯ মাস, তখন পাষণ্ড পিতা রিফাজ নিষ্পাপ শিশুর মুখে বিষ ঢেলে দেয় হত্যার উদ্দেশ্যে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তার মা দ্রুত স্থানীয় হাসপাতাল বাঘা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে মেয়েকে সুস্থ করে চলে যান তার বোনের বাড়ী, লিজার খালার বাসায়। সেখানেই লিজার দারিদ্রতার সাথে লড়াই সংগ্রাম করে বেড়ে উঠা। সেখানেই মামা খালাদের কাছে থেকে পড়াশোনা পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তত করতে থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জেদ নিয়ে। স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বাঘা শাহাদৌলা ডিগ্রী কলেজে অনার্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় চলতি শিক্ষাবর্ষে। গত মাসে পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। এরপর বাকী ধাপ গুলো নিজের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে জয় করে নেয় লিজা।
লিজা খাতুন জানিয়েছেন, তার এই পথ খুব একটা সহজ ছিল না। তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেন বাবা নেই, মা খালা ও মামার সহযোগিতায় তাকে মানুষ হতে হয়েছে। অনেকেই বলতো বাবা নেই, সেকারণে তার মা তাকে মানুষ করতে পারবে না। বাবার তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় খালা ও মামারা তাকে স্কুল কলেজে পড়ান। অনার্সেও ভর্তি করে দেন। শিক্ষকরাও অনেক সাহায্য করেছে। প্রাইভেট পড়িয়ে অনেক শিক্ষক টাকা নেয় নি। লিজা আক্ষেপের সাথে বলেন, একটু বড় হওয়ার পর শুনেছে তার বাবার নিষ্ঠুরতার কথা। বাবার সাথে এখনো তার দেখা হয়নি। তার বয়স যখন ১০ মাস তখনই কাজের সন্ধানে ঢাকায় যাওয়ার নাম করে তাদের ছেড়ে চলে যান, আর ফিরে আসেননি। এমন কি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগও করেননি। নিজেকে গড়ে তুলেন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পুলিশের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে একশ ৫০ টাকা খরচ করে আবেদন করেন। এরপর উচ্চতা, শরীর চর্চা, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা সহ ৭টি ধাপ পার করে তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে।
তার এই চাকরির জন্য কারো সুপারিশ, তদ্বির করা লাগেনি বলেও জানান লিজা।
এক প্রশ্নের জবাবে লিজা জানান, বাবার কৃতকর্মের জন্য তাকে শাস্তি দিতে চান না, বাবা যে মেয়েকে হত্যা করতে চেয়েছিল সেই মেয়ের জন্য যেন এখন গর্ববোধ করেন। লিজা বলেন, পুলিশের চাকরি করে তার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান।
রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলছেন, লিজা অনেক মেধাবী। সে ১০ হাজার প্রার্থীর মধ্যে একজন ছিল। নক আউট সিস্টেমে একে পর এক পরীক্ষার ৭টি ধাপ পার করে আজ পুলিশে চাকরি পেয়েছে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।