বিএনএ, ডেস্ক –বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তাদের মিত্র দলগুলোর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দল মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি দলীয় নেতাদেরও প্রার্থী হতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক চার মাসের মাথায় প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৫২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন।
একই কৌশলে এবার উপজেলা নির্বাচনকেও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য এবার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটি দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার পেছনে বিএনপিসহ বিরোধীদের ভোটে আনাও অন্যতম লক্ষ্য।
কিন্তু উপজেলা নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও কার্যত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলেরই তেমন আগ্রহ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ফলে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনেও ভোট বর্জনের পথে হাঁটছে সরকার বিরোধী দলগুলো। উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে আন্দোলনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনকে দলের জন্য আওয়ামী লীগের পাতা ‘ফাঁদ’ মনে করছে। তাদের মতে, সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে তাতে সরকার ফলাও করে প্রচার করতে পারবে যে- বিএনপি বুঝতে পেরেছে সংসদ নির্বাচনে না যাওয়া তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। একই সঙ্গে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান বিতর্কও চাপা পড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
তবে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা বেশিরভাগই নিজ নির্বাচনি এলাকার উপজেলাসমূহে পছন্দের লোককে চেয়ারম্যান , ভাইস- চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘মনোনয়ন’ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, বিএনপি দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দলটির তৃণমূলের নেতাদের কেউ কেউ। তারা এখন তাকিয়ে আছেন দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য অভিমত দিয়ে বলেছেন, তৃণমূলের কেউ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে দল কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসাহিত করবে না, আবার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা না নেওয়ার কৌশল নেবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনেই যাবে না। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হয় না, নির্বাচনের নামে নাটক হয়।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমাদের মূল মনোযোগ দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দিকে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমরা দলকে সংগঠিত করে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে রয়েছি।
বর্তমান সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এরইমধ্যে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, দলটি দলীয়ভাবেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। জাতীয় পাটি গতবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র তিনটি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছিল।
এবারও জাপার প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো জামায়াতের দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে, জামায়াতের কোনো কোনো তৃলমূল নেতা স্বতন্ত্রভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন। এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয়ভাবে ‘নিরব সায়’ রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন জামায়াত ইসলামীর স্থানীয় নেতারা। ভিতরে ভিতরে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপির মিত্র জোট ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আর আত্মহত্যার মধ্য তফাত নেই।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোট এবং ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত নতুন দলগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রার্থী দিলেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তাদেরও আগ্রহ নেই। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও অন্যতম একটি কারণ। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যাদের আর্থিক সামর্থ্য এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে তারাই প্রার্থী হবেন। এখানে দলের মনোনয়নের প্রয়োজন নেই।
গতবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলটি অংশ নেয়নি। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলটি প্রার্থী দেবে না বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিদ্যমান আইনে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস-চেয়ারম্যান- এই তিন পদেই রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রার্থী তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী