22 C
আবহাওয়া
৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ছয় ব্যাংকের দুই এক্সেচেঞ্জ মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছয় ব্যাংকের দুই এক্সেচেঞ্জ মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছয় ব্যাংকের দুই এক্সেচেঞ্জ মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

।। সৈয়দ শাকিব ।।

বিএনএ, ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি শক্তিশালী চক্র ডলার কারসাজি ও পাচার করে আসছে। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক চক্রটি বছরের পর বছর কোটি কোটি ডলার পাচার করে আসছে। দেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ এই চক্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু ব্যাংকার ও অসাধু চক্র লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে ডলার কারসাজি ও পাচার করে আসছে। ফলে প্রবাসী বা বিদেশিদের বিক্রি করা ডলার দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। সাধারণত বিমানবন্দরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব অর্থে বৈদেশিক মুদ্রা কেনার কথা। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা না কিনে তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে তা কিনছেন। পরে এসব ডলার বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি কিংবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। এ খাত থেকে চক্রটি প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে। এ কারণে মাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না।

YouTube player

শুধু তাই নয়, এ চক্রের কারণে প্রবাসীদের কাছ থেকেও ক্রয়কৃত ডলার বা বিদেশি মুদ্রা সরকারের খাতায় যোগ হচ্ছে না। বহু বছর ধরে তারা এই কাজ করে আসছে। অথচ এতদিন তারা ছিল ধোরাছোয়ার বাইরে।

সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও পাচারে জড়িত দেশের ছয়টি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান। ছয়টি ব্যাংক হলো রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক; বেসরকারি মিচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার।

প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিভিন্ন দেশের নাগরিক শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন। বিমানবন্দরে থাকা উল্লিখিত সাত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি লোকজনের কাছ থেকে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা কিনে তা কালোবাজারিদের মাধ্যমে পাচার করেন। বিদেশি মুদ্রা কেনার পর সেই মুদ্রা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে যুক্ত করার কথা থাকলেও সেটা করা হয় না। বরং এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য না দিয়ে মানিল্ডারিং করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি ব্যাংক ও দুই মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিদেশি মুদ্রা পাচারে জড়িত শক্তিশালী কালোবাজারি চক্রের হোতাদের ধরতে সম্প্রতি অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের এনফোর্সমেন্টের টিম কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মুদ্রা পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।

ছয়টি ব্যাংকের ১৯ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, দুটি নিবন্ধিত মানি এক্সেচেঞ্জের মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দুদক দুটি মামলা দায়ের করেছে। ২৭ মার্চ বুধবার দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে-১ এর উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন।

এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে, জাল ভাউচার তৈরি করে বিদেশফেরত প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলে অন্তর্ভুক্ত না করে বেআইনিভাবে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। আসামিরা ফরেন কারেন্সি ক্রয়- বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশমালা ও ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধ করেছেন।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এ বিষয়ে বলেন, বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে মুদ্রা সরবরাহ করছেন।

দেশে চলমান ডলার সংকটের পেছনে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয়কে দায়ী করে তিনি বলেন, অবৈধভাবে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধ এসব অর্থ দেশের বাইরে পাচারও হতে পারে। দুদক এখন থেকে এসব বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করবে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ