বিএনএ: নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর অভিযোগের তদন্ত চেয়ে করা রিটের পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ এপ্রিল। শুনানিতে ওইদিন ভুক্তভোগী নারীর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং র্যাবের গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নেয়ার এখতিয়ার সম্পর্কিত আইনি দিক দেখবেন হাইকোর্ট।
শুনানিতে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কারও অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা ছাড়া র্যাব কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে কি না? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার র্যাবের আছে কি না, তাও জানতে চান। একই সঙ্গে আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে থানা অথবা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাব আইনগত পদ্ধতিতে জিজ্ঞাসা করেছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এছাড়া সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত তথ্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ, ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী র্যাব হেফাজতে নওগাঁর ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় মামলা না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে পদক্ষেপ চান।
এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তিনি অসুস্থ হলে হাসপাতালে মারা যান। এ বিষয়ে আগামী বুধবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামের নারীর মৃত্যুর অভিযোগের খবর সোমবার (২৭ মার্চ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে খোঁজ নিয়ে জানাতে বলেন যে, এই মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না? ১৫ মিনিট পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান যে আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ আদালতকে বলেন, ওনারা (ভুক্তভোগীর পরিবার) কোনো মামলা করেননি। তখন হাইকোর্ট বলেন, কেন ওনারা মামলা করবেন? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই? দেশজুড়ে এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, আমরা ভুক্তভোগী নারীর সুরতহাল রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখবো, সেটা আগামীকাল নিয়ে আসবেন। আর ওই নারীকে গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন তাদের সবার নাম-পরিচয় আদালতে দাখিল করবেন। আমরা দেখতে চাচ্ছি এ ঘটনার সঙ্গে আইনের কোনো গাফিলতি আছে কি না। একই সঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, জনগণ তাকিয়ে আছে ন্যায়বিচার দেখতে। আর আমরা আছি ন্যায়বিচার করতে। এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জান্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিককে রিট আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় রিটটি করেন আইনজীবী।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
বিএনএনিউজ/এ আর