বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খন্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভান্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। ১ মার্চ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার নেপথ্যে গণ মাধ্যমের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের।
আজ(২৮ মার্চ২০২২) প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৮
১০ জু্লাই, ১৯৭১
বেশী দিনের কথা নয়। মাত্র কয়েক দিন আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন- “বাংলাদেশের লাখো শহীদের লাশের তলায় পাকিস্তানের কবর হয়ে গেছে।” প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীনের এই উক্তির ক’দিন পরেই লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক ডেলী মিরর- এ প্রকাশিত A DEATH OF A NATION শিরোনামের একটি মর্মস্পর্শী রিপোর্টে বাংলাদেশে পাক বর্বরতার লোমহর্ষক বিবরণ দিয়ে এই একই মন্তব্য করা হয়।
এর আগে লেবানিজ দৈনিক ‘আল সাব’ পত্রিকায় ARTIFICIALLY CREATED PAKISTAN IS UNFIT TO CONTINUE শিরোনামের রিপোর্টেও এই একই মন্তব্য করা হয়। তারপর গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী NEWSWEEK- এ প্রকাশিত THE TERRIBLE BLOOD BATH OF TIKKA KHAN শিরোনামের রিপোর্টে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বীভৎস হত্যাযজ্ঞ, ব্যাভিচার, নির্যাতন ও ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়ে মন্তব্য করা হয় যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের কবর হয়ে গেছে। পাকিস্তান ভেঙ্গে দু টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এ ভাঙ্গন জোড়া দেয়ার নয়। স্বাধীন সার্বভোম বাংলাদেশ আজ একটি বাস্তব ঘটনা। চলতি সপ্তাহে নিউজউইক লিখেছেন, পশ্চিম পাকিস্তান যেদিন বাংলাদেশে সৈন্য পাঠিয়েছে সেই দিনই পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে।
সম্প্রতি কানাডীয় পার্লামেন্টের তিনজন প্রভাবশালী সদস্য বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া সর্বহারা শরণার্থীদের অবস্থা এবং বাংলাদেশে পাক বর্বরতার নমুনা দেখার জন্যে শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শন করে গিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেছেন : ‘পূর্ব পাকিস্তান’- এই নামে কোন রাষ্ট্র-রাষ্ট্রাংশের অস্তিত্ব আর নেই। বাংলাদেশ আজ একটি বাস্তব সত্য।
সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় পরিষদ সদস্যগণ এ কথা জোর দিয়ে বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি। নির্বাচন ও গণতন্ত্রের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আর এই আস্থা বলেই আমরা মনে করি বাংলাদেশের গণনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।
কানাডীয় পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদলের নেতা, কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির মি: জর্জেস লাচাঁস সাংবাদিকদের বলেন : শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার দাবী জানিয়ে অন্যায় কিছু করেননি। তিনি বলেন, কানাডার অনেক পরিষদ সদস্যই তো কুইবেক- এর বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবী তুলেছেন। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। অতএব এই গণতান্ত্রিক অধিকার তোলার জন্যে কাউকে অপরাধী বলে গণ্য করা উচিত নয়।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – ৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৬৫) চলবে।
পড়ুন আগের পর্ব সমূহ:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৪
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা