বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার অনন্যা আবাসিকে কলেজছাত্র ফটোগ্রাফার শাওন বড়ুয়া খুনের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ইমতিয়াজ আলম মুরাদ, আশহাদুল ইসলাম ইমন, মো. তৌহিদুল আলম, মো. বাহার ও মো. আলমগীর।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আড়াইটার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পঙ্কজ দত্ত বলেন, শাওন বড়ুয়া নামে এক ফটোগ্রাফারের ডিজিটাল ক্যামেরা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন পাঁচ ছিনতাইকারী। পরে পরিকল্পনা মতো তারা শাওনকে নির্জনে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, নির্জনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, থাকবে না কোনো লোকসমাগম। কেউ কোন কিছু জানতে পারবেও না।
শাওনকে হত্যা করে ক্যামেরা নিয়ে পালিয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু ভুলে রেখে গেছে শাওনের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি। সেই মুঠোফোন দিয়ে হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন নগরের চান্দগাঁও থানার তিন পুলিশ অফিসার।
জানা গেছে, নগরের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইমন ও তৌহিদ। অন্যজনের হয়ে তারা বিভিন্ন বিয়ে অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। পরে তাদের একটি ডিজিটাল ক্যামেরার শখ জাগে। বিষয়টি তারা এলাকার বড় ভাই বাহারকে জানায়। বাহারসহ মিলে তারা ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ফন্দি আঁটেন। সেখানে তারা যুক্ত করে সিএনজি অটোরিকশা চালক আলমগীর ও মুরাদকে। তারা প্রথমে কয়েকটি ফেসবুক পেইজে বিয়ে বাড়িতে ফটোসেশন করার জন্য যোগাযোগ করেন। অনেকেই তাদের সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে জনি বড়ুয়া নামে এক ফটোগ্রাফার সাড়া দেন। তিনি শাওন বড়ুয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পঙ্কজ দত্ত জানান, সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তারা বিয়ে অনুষ্ঠানের কথা বলে শাওনকে বেপারি পাড়ার ভাঙা পুলের মাথায় আসতে বলেন। সেখানে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ইমন, তৌহিদ ও চালক আলমগীর অপেক্ষায় থাকেন। মুরাদ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাহির সিগন্যাল ম্যাফ সুজ গার্মেন্টসের সামনে থেকে শাওন বড়ুয়াকে রিসিভ করে নিয়ে যায়। ঘটনাক্রমে অপেক্ষায় থাকা সিএনজি অটোরিকশার দিকে না গিয়ে অন্যদিকে চলে যায় মুরাদ। পরে বিষয়টি শাওন আঁচ করতে পারলে মোটরসাইকেলের মধ্যে দুজনের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মুরাদ শাওনের উরুতে ছুরিকাঘাত করে। পরে শাওন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে সুযোগে মুরাদ একের পর এক শাওনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি ছুরিকাঘাত করেন।
পরে মুরাদ বিষয়টি বাহারকে জানিয়ে দিয়ে বলে, ভাই আমি শাওনকে মেরে ফেলেছি। তখন বাহার এসে ক্যামেরাসহ মুরাদকে নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু রেখে যায় শাওনের মুঠোফোনটি। সেই মুঠোফোনের সূত্র ধরে ওই পাঁচ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশের এস আই ফয়সাল আজিজ, সোহেল রহমান রানা ও রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম।
পঙ্কজ দত্ত আরও বলেন, মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ শাওনের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই ব্যাগ জব্দ করা হয়।
বিএনএনিউজ/ বিএম/হাসনা