।।কাইমুল ইসলাম ছোটন।।
বিএনএ : ”চলো দোতং পাহাড় জুম ঘরে, পূর্ণিমা রাত বর্ষা জুড়ে জীবন জুয়ার আসর বসাবো” গানের মতো পর্যটকরা সুযোগ পেলে পাহাড়ে ছুটে আসেন। ইট পাথরের জটিল ধাঁধার শহর ছেড়ে স্বস্তি নিতে আসেন মানুষ। সবুজ পাহাড়ের নীল আকাশে মেঘের মিতালি, আকাঁবাকা রাস্তা ও কাপ্তাই হ্রদের স্থির জলরাশির অপার সৌন্দর্য উদাস ভাবনায় রেখে দেয় পর্যটকদের। বর্ষাতে নতুন যৌবন পান পাহাড়। পানিতে টইটম্বুর থাকে কাপ্তাই হ্রদ, ঝিরি-ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে গাঁ ভিজিয়ে জীবনের আনন্দে ভরে ওঠে মন। সাজেকের মেঘ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেন পর্যটকরা। যেন জগতের ভিতরে ভিন্ন এক জগত। বারবার পর্যটকদের আসতে বাধ্য করেন রূপের রানী।
তবে সাম্প্রতিক এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিষাদময় করে তুলেছে পাহাড়ের পর্যটন খাত। এমন ঘটনায় পর্যটকদের মধ্যে এক আতঙ্ক তৈরি করছে। বিভ্রান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রাও। সাজেক বলতেই পর্যটকদের ভিন্ন এক অনুভূতি। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত তিন দিন মেঘের রাজ্য সাজেকে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে প্রশাসন। বর্তমানে সাজেকে শূন্য পর্যটক, লোকসান গুনছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সব মিলিয়ে পুরনো রূপে ফিরবে পাহাড় এমন প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষায় পাহাড় নতুন রূপ ধারণ করে। নভেম্বর-ডিসেম্বর শীতের দিনে পর্যটনে ভরপুর থাকে। তবে পাহাড়ের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে দেশ জুড়ে। এতে কিছুটা ক্ষতি হলেও সব আগের মতো হবে বিশ্বাস তাদের। পাহাড়ে বাড়বে পর্যটক, পর্যটকরা মুগ্ধ হবেন পাহাড়ের রূপে।
তারা বলেন, পাহাড়ে পর্যটকদের জন্য সুবিধা-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। নতুন পর্যটন স্থান তৈরি এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি আইন ও নিরাপত্তার প্রতি জোর দিতে হবে। আর্থিক বিনিময়ের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে। যেন সহজে তারা আর্থিক লেনদেন করতে পারেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরে ৫৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ে পর্যটক কম থাকায় হোটেল-মোটেল প্রায় শূন্য। বুকিং হয়েছে ১০-২০% মত, ফাঁকা রয়েছে অর্ধকের বেশি কক্ষ। অথচ প্রতিবছর এসময়ে পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে রাঙামাটি। বিগত এক মাস ধরে সিম্পল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজেও হ্রদের পানি উঠে গেছে। পর্যটকরা রাঙামাটি আসলে এখানে ঘুরে যান। তবে ডুবে যাওয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা হতাশ হচ্ছেন।
এদিকে মেঘের রাজ্য সাজেক পর্যটক শূন্য। সাজেকের বুকে চলছে সুনশান নিরবতা। পর্যটক না থাকায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে সাজেক, অনেকে তাদের রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, এক দশক আগেও বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটত পাহাড়ে। এখন তা তুলনামূলকভাবে কম। তাই তাদের আসার পথ সহজ করার কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
সাজেকের সেনিলুসাই রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, বর্তমানে সাজেকে কোন পর্যটক নেই। একদম শূন্য। অনেকে রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেললেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পেলে সাজেক আবারও পর্যটকের পদচারণায় মুখর হবে বলে জানান তিনি।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, দিবস আসে পালন হয়। কিন্তু রাঙামাটিতে পর্যটন খাত নিয়ে সবার সাথে সমন্বয় না থাকায় বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে পর্যটকের আকৃষ্ট করার জন্য নতুন পর্যটন স্পষ্ট গড়ে ওঠলেও রাঙামাটিতে হচ্ছে না। সবার সমন্বয় এবং সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারণে পর্যটন খাতে রাঙামাটি পিছিয়ে পড়ছে। পর্যটনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
পাহাড়ের পর্যটন খাতের নারী উদ্যোক্তা গরবা গুদি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী নিলা চাকমা বলেন, রাঙামাটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট একটি এলাকা। এখানকার পর্যটন খাত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। না হয় নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে চাইবে না। পর্যটন খাতে আলাদা ঋণ সুবিধা দিতে হবে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের পর্যটকদের প্রতি আন্তরিক হতে হবে, তাহলে পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে।
রাইন্ন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ললিত সি চাকমা বলেন, এখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ের পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের জন্য আর্থিক লেনদেন বিনিময় সহজ করতে হবে। তাহলে অন্যান্য এলাকা মতো এখানে বিদেশী পর্যটকের সাথে দেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। এখানকার অর্থনীতি চাঙা হবে।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, পর্যটক খুব কম, ঘুরতে আসা পর্যটকদের ২০% ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আজ পর্যন্ত আমাদের এখানে ২০% মতো বুকিং হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গেলে ঝুলন্ত ব্রীজ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। আশা করছি, পর্যটন মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক পাব।
বিএনএ/এইচ.এম।