16 C
আবহাওয়া
৬:০৫ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সঠিক উদ্যোগের অভাবে তাল মেলাতে পারছে না পাহাড়ের পর্যটন খাত

সঠিক উদ্যোগের অভাবে তাল মেলাতে পারছে না পাহাড়ের পর্যটন খাত


।। কাইমুল ইসলাম ছোটন ।।

বিএনএ, রাঙামাটি : ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’- অনেক বছর আগেই লিখেছেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। বাংলার সে রূপ যেন রূপের রানী রাঙামাটি। পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য। পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের দলছুট

এবং কাপ্তাই হ্রদের স্থির জলরাশিতে নৌ ভ্রমণ পর্যটন খাতে খুলে দিয়েছে অসীম সম্ভাবনার দ্বার। এ সম্ভাবনায় আলো জ্বালাচ্ছেন তারুণ্যও। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে তাল মেলাতে পারছে না পাহাড়ের পর্যটন খাত।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পর্যটন আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতু অর্ধ মাসেরও বেশি সময় ধরে ডুবে আছে হ্রদের পানির নিচে। সেতুর রেলিং পর্যন্ত পানি উঠে গিয়ে সেতুটি নিজেই পানিতে ঝুলছে এখন। এ নিয়ে পর্যটকদের পাশাপাশি হতাশ সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্প্রীতি, নিজস্ব ভাষা ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যের অঞ্চল রাঙামাটি। এ যেন এক অপরূপ রূপে হাতছানি দিয়ে রানি ডাকছে, আয় আমার রূপের রাজ্যে। প্রকৃতির রূপের ভাণ্ডার এ জেলার ঝিরি, সবুজ উপত্যকা অরণ্য, মাচাং ঘর যে কাউকে বিমোহিত করে। পাহাড়ি ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের ধারায় গা ভেজাতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। মুগ্ধ হন ভ্রমণ পিপাসুরা। একেক ঋতুতে একেক রকম রূপে সাজে পাহাড়ের প্রকৃতি। কিন্তু সঠিক উদ্যোগের অভাবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে পিছিয়ে পড়ছে রাঙামাটি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, রাঙামাটি শহরে ৫৫টি হোটেল-মোটেল এবং সাজেকে ১৮০ টি কটেজ (রিসোর্ট) রয়েছে। বর্তমানে সাজেকে ৭৫% বুকিং হলেও শহরে তুলনামূলক কম। রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ওনাদের ৫০% বুকিং হয়েছে এবং পর্যটন দিবস উপলক্ষে তারা ২৭% ছাড় এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা করছেন। এদিকে চার দিন ব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

পাহাড়ের তরুণ উদ্যোক্তারা বলেন, বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বাইরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু পাহাড়ের পর্যটন নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা না থাকায় পুরাতনে ভরসা হচ্ছে পর্যটকদের। তবে এ সম্ভাবনাময় খাতে এগিয়ে এসেছেন তরুণরা। তারা বিনোদন কেন্দ্র বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের কথা বললেও এদিকে পাহাড়ের পর্যটন বিকাশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা সালা উদ্দিন ও তার বন্ধুরা বলেন, ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। এখন দেখি সেতু পানিতে ডুবে আছে। তাছাড়া রাতে রাঙামাটিতে ঘুরাঘুরির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নিয়মিত অনুষ্ঠান থাকলে ভালো হয়।

পাহাড়ের পর্যটন নিয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় পর্যটন বিষয়ক লেখক মোখলেছুর রহমান সাথে। তিনি জানান, স্থানীয়দের কাছে পর্যটন খাত পৌঁছাতে পারলে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। যেখানে তারা নিজের বাড়িতে অবস্থান করে এই খাতের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে। পর্যটন ১৪ টি নতুন পেশার সৃষ্টি করতে পারে। এক স্থানে কতজন পর্যটক বাহির থেকে গেলে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্থ হবে না এ পরিমাণ পর্যটক বর্তমানে নির্ধারণ করে দিতে হবে।

পাহাড়ের পর্যটন বিষয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজের ‘টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মঈনুল হাসান পলাশ বলেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেশের পর্যটন ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে যে পরিমাণ পর্যটক বিদেশে যান, একই পরিমাণ পর্যটক বিদেশ থেকে আসে না। লক্ষ্যমাত্রা এবং পর্যটনের আন্তর্জাতিক মার্কেটিং (প্রচার) ঘাটতির কারণে বিদেশি পর্যটকের পরিমাণ কমতেছে। যার কারণে পর্যটন শিল্প দাঁড়াতে পারছে না। তাছাড়া পাহাড়ের স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মেশার, তাদের অতিথিয়তা গ্রহণ করার সুযোগ এবং আস্তা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

রাইন্ন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ললিত সি চাকমা জানান, পাহাড়, প্রকৃতি, ঝর্ণা, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে রাঙামাটিতে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এবং সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আর্থিক প্রণোদনা দিলে জনবান্ধন পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে। পর্যটন খাতে রাঙামাটিতে ১১০ প্রকারের পণ্য ও সেবার লেনদেন হয়। তাহলে এখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পর্যটনের মাধ্যমে এক সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির আদান প্রদান হয়। যাতে সুন্দর চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সবাই এগিয়ে আসলে নতুন পর্যটন স্পট তৈরি হলে পর্যটন শিল্প আরও এগিয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক খোকনেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, পর্যটন ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিয়ে সেবার মানসিকতা বাড়ানো গেলে পর্যটক আসবে। পর্যটন উন্নয়নে পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ হলে পর্যটকদের সেবা করার জন্য জনবল লাগবে তাহলে নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টি  হবে এবং স্থানীয় সম্পৃক্ত করতে পারলে স্বার্থকতা আসবে। পর্যটনের আসল উদ্দেশ্য হলো লোকাল উন্নয়ন। আমাদের সম্পদ কাপ্তাই হ্রদকে উপভোগ করার জন্য পানি কেন্দ্রীক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের জানান,

রাঙামাটি হচ্ছে পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি জায়গা। পর্যটক বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয়দের কাজ করতে হবে। এদিকে এখন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে টুরিজম বোর্ডের বিনিয়োগের কোন পরিকল্পনা নেই জানান তিনি।

বিএনএনিউজ/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ