আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান হাসিনা শাসনের সবচেয়ে নিষ্ঠুর, নির্দয় ও হৃদয়বিদারক অত্যাচার ছিল গুম ও খুন।বিচারবহির্ভূত হত্যা। যা ছিল সে সরকারের সবচেয়ে বড়গুণ। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার অল্প কদিনের মধ্যে গুম হলেন সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম। এরপর থেকে একের পর এক গুমের ঘটনা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। এসব গুম-খুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশবাসীর মনে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করা। যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ গুম হয়ে যেতে পারে, এমন আতঙ্কে মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলল এবং নিজেদের গুটিয়ে ফেলল।
শুধু ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমকে গুম করে এই গুমের মহড়া থেমে থাকেনি। বেশ কয়েকশ মানুষকে গুম করে রাখা হয়। এদের মধ্যে অনেককেই হয়তো পরপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথায় তাদের লাশ পুঁতে ফেলা হয়েছে, কোথায় তাদের লাশ নদীর জলে-সাগরের জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোথায় তাদের লাশ অ্যাসিডভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয়েছে, তার হদিস তাদের স্বজনরা এবং দেশবাসী আর কখনো হয়তো জানতে পারবে না। তাদের অপেক্ষায় প্রিয়তমা স্ত্রী নীরবে চোখের পানি ফেলেছে, তাদের অপেক্ষায় সন্তানরা বলেছে বাবা কোথায়, বাবা কেন আসে না-এর চেয়ে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে!
২০০০ সালের আগের কথা। কদিন পর পর দেশের বিভিন্ন নদীতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসতো অজ্ঞাত মরদেহ। পচেগলে মরদেহের অবস্থা এমন হয়ে যেত যা কোনভাবেই কেউ নিজের স্বজন বলে চিহিৃত করতে পারতো না।
ডিজিটাল বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে কত অজ্ঞাত মরদেহ নদী পুকুর বা জলাশয় হতে উদ্ধার করা হয়েছে তার কোন ডিজিটাল ডাটা নেই।
বছরখানেক আগে আলজাজিরা আয়নাঘরের রহস্য ভেদ করেছিল। তখন স্বৈরাচারের দোসররা বলেছিল, এসব নিছক অপপ্রচার। এখন যখন ব্রিগেডিয়ার আযমী, ব্যারিস্টার আরমানসহ আরও কয়েকজন আয়নাঘর নামীয় অন্ধকূপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের আকাশ-বাতাসে ফিরে এসেছেন, তখন আর মনে হয় না আয়নাঘরের ব্যাপারটা একটা মিথ।
৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আয়নাঘরের নির্মমতার কাহিনি জনসমক্ষে ফুটে উঠেছে।
গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ বহুবার সংবাদ সম্মেলন করে গুম হয়ে যাওয়াদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, আয়নাঘর যেখানে আছে বলে মনে করা হয়, সেখানে গিয়ে ‘মায়ের ডাক’-এর সদস্যরা সেখানে আটকে থাকা মানুষগুলোর মুক্তি দাবি করে মানববন্ধন করেছে।
এখনো যারা আয়নাঘর অথবা অচিহ্নিত বন্দিশালায় কষ্টের দিন পার করছেন, তাদের আপনজনদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করি। সে সাথে গুড়িয়ে দেয়া হোক আয়নাঘর।
রহমত আলী, রুপপুর, নারায়ণগঞ্জ।
মতামতের জন্য সম্পাদক বা প্রকাশক দায়ী নন। তা লেখকের নিজস্ব মতামত।