30 C
আবহাওয়া
২:৪৮ পূর্বাহ্ণ - জুন ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৬ (টাঙ্গাইল-৭)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৬ (টাঙ্গাইল-৭)


বিএনএ,ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল -৭ আসনের হালচাল।

YouTube player

টাঙ্গাইল -৭ আসন 

টাঙ্গাইল-৭ সংসদীয় আসনটি মির্জাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৩৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির খন্দকার বদর উদ্দিন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ হাজার ৫ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৫ শত ২ জন। নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার বদর উদ্দিন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৮ শত ৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ফজলুর রহমান ফারুক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৩ শত ৯২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬ শত ২৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৮ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৩ শত ৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ২ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৯ শত ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৭ হাজার ৮ শত ৫৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৫ হাজার ১ শত ৭৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩০ হাজার ১ শত ৫৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৯ শত ১৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২২ হাজার ৬ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪ শত ৪৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জহিরুল ইসলাম জহির, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের শাহিনুর ইসলাম, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের রুপা রায় চৌধুরী ও দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিশের সৈয়দ মজিবর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৭ হাজার ৯ শত ৪৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

গত ১৬ই নভেম্বর এ আসনের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন মৃত্যু বরণ করলে, আসনটি শূণ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খান আহম্মেদ শুভ। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী, জহিরুল ইসলাম জহির পেয়েছেন ১৬ হাজার ৭ শত ৭৩ ভোট।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়। অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-৭ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৭ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৫১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৯৩%, বিএনপি ৫৩.০৬%, জাতীয় পাটি ৮.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.০৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২৯%, বিএনপি ৪১.১০%, জাতীয় পাটি ১৯.১৯%, জামায়াতে ইসলামী ১.৬৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৯০%, ৪দলীয় জোট ৪৬.৭৯%, জাতীয় পার্টি ১.৫০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৮১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.২১%, ৪দলীয় জোট ৩৯.৭৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.০২% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) : এ আসন থেকে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খান আহমেদ শুভ। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আরও মনোনয়ন চাইবেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর (অব.) খন্দকার এ হাফিজ, মির্জাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু , মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরিম হোসেন সীমান্ত।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মির্জাপুর উপজেলা সহসভাপতি এ কে আজাদ স্বাধীন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জহির

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। তিনবারের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন মৃত্যুবরণ করার পর টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খান আহমেদ শুভ নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে তিনি এখনো অভিজ্ঞ ও তৃণমুল পর্যায়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগে রয়েছে দলীয় কোন্দল। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, এতে সন্দেহ নেই। সেই দিক থেকে নির্ভার রয়েছে বিএনপি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩৬তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৭ আসনটিতে বিএনপি ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ