বিএনএ ডেস্ক: দিনভর গুমোট আবহাওয়া। মাঝেমধ্যে ঝড়ো হাওয়া। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় সবকিছু। ফুঁসতে থাকে নদনদী। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি। জলোচ্ছ্বাসে ডুবতে থাকে উপকূল। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ গতকাল রোববার দুপুর থেকে উপকূল স্পর্শ করতে শুরু করে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে।
এ সময় গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। জোয়ারের অথৈ পানিতে ডুবেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ের সময় উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক শামীম আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মোংলা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে সাতক্ষীরা ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ডের মাঝখান দিয়ে ঢুকেছে ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রটি। মূল কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ অনেক বড় থাকায় এটির প্রভাব আশপাশের এলাকাগুলোতেও পড়তে শুরু করেছে। আঘাতের সময় সাগরে ভাটা থাকায় তেমন বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। ঝড়ের শেষ ভাগটি উপকূল অতিক্রম করার সময় সাগরে জোয়ার থাকার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস বাড়বে।
গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়। গতকাল সকালে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।
উপকূল পানির নিচে
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বিকেল থেকে উপকূলের নদী, খালে পানি বাড়তে শুরু করে। রাত ১১টা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। কিছু নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিতে উপকূলীয় অঞ্চলের নদনদী উত্তাল হয়ে ওঠে। রেমালের সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গেছে বাগেরহাটের মোংলা ও সুন্দরবন এলাকায়। এবারও ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। রেমালের সঙ্গে টানা কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখো গাছ। অতি জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে; এতে বন্যপ্রাণীর প্রাণহানির শঙ্কা করছে বন বিভাগ। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ/ হাসনা