বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: ঋতু পরিবর্তন ও গরমের তীব্রতায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরময় গবেষণা কেন্দ্র-আইসিডিআরবি’তে এখন কোন ছিট খালি নেই। রোগী সামাল দিতে গত শুক্রবার থেকে হাসপাতালের বাইরে দুটি বড় তাবু টানানো হয়েছে। তাতেও হচ্ছে না জায়গা সংকুলান। রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক-নার্সদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমন চিত্র শুধু রাজধানীতে নয়। করোনার পর ডায়রিয়ার রোগী নিয়ে নতুন করে বিপাকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। দেশের প্রতিটি জেলায় শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। শারীরিক নানা জটিলতায় অনেকে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
চিকিৎসকরা জানান, বিগত বছরগুলোতে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি দেখা গেছে। তবে করোনার পর এবছর ছিত্র অনেকটা ভিন্ন। সব বয়সের মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিরাপদ পানি পান করায় বেড়েছে ডায়রিয়ার তীব্রতা।
পরিসংখ্যানে বলছে, আইসিডিআরবি’তে আগের বছরগুলোতে এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ভর্তি হতো। চলতি বছরের ১৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা কোন দিন হাজারের নিচে নামেনি। চিকিৎসকরা জানান, এ চিত্র শুধু ঢাকার নয় সারাদেশেই ডায়রিয়ার এমন ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, দৈনন্দিন কাজে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়রিয়া থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব। পাশাপাশি ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়…
১. মলত্যাগে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা।
২. মলত্যাগের পর ও খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
৩. খাবার তৈরি ও পরিবেশনের পূর্বে হাত ভাল করে ধুতে হবে। ব্যবহারের থালা-বাসন, চামচ-বাটি ও জিনিসপত্র বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুতে হবে।
৪. ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার দেয়ার দরকার নেই।
৫.বাসি-পচা, মাছি বসা বা বাইরের খোলা খাবার, রাস্তার শরবত বা ফলের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. রান্না করা খাবার গরম গরম খেয়ে নেয়াই উত্তম। বাড়তি খাবার ভাল করে সংরক্ষণ করা জরুরি। তবে ফ্রিজের বা বাসী খাবার আপাতত না খাওয়াই উত্তম।
৭. ফোটানো পানি পরিস্কার পাত্রে সংরক্ষণ করা জরুরি। পান করার আগে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
৮. বাইরের পানি কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। পুকুর বা জলাশয় বা লাইনের পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করতে হবে।
৯. গরমে পানির তৃষ্ণা মেটাতে সঙ্গে সব সময় বিশুদ্ধ পানি রাখুন।
১০. শিশু ও বয়স্কদের খাবার দেয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি তাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে করণীয়…
১. প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাবার স্যালাইন বা বাড়িতে তৈরি স্যালাইন খেতে হবে।
২. তরল জাতীয় খাবার যেমন, ডাব, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
৩. ডায়রিয়ার সময় অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে।
৪. আক্রান্তদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
৬. পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনার কোন বিকল্প নেই। সচেতন থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
বিএনএ/ এ আর